রাজশাহীতে এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে মিলছে রাসায়নিক মুক্ত মাছ ও সবজি

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩; সময়: ৪:৪২ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে মিলছে রাসায়নিক মুক্ত মাছ ও সবজি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাছ ও সবজি চাষের সমন্বিত পদ্ধতি এ্যাকুয়াফনিক্স। কম খরচে মাটি ছাড়াই বাড়ির ছাদে বা উঠানে নতুন এই পদ্ধতিতে একই সঙ্গে মাছ ও সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।

কৃষি বিভাগ বলছে, এক ইঞ্চি জায়গাও ফেলে রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে এ্যাকুয়াফনিক্স প্রদ্ধতি। এই চাষ পদ্ধতিতে চাষিদের উৎসাহিত করতে আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতা দিচ্ছে সরকারের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শতফুল বাংলাদেশ।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের রুনা বেগমের বাড়ির উঠানে ছোট্ট একটি চৌবাচ্চা। দূর থেকে দেখে মনে হবে এটি একটি পানির ট্যাংক। কিন্তু এখানেই চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। রুনা বেগম ছাড়াও মাছ চাষ বেশী দেখা-শোনা করেন তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে রতন প্রামানিক।

শুধু মাছ নয়, এখানে মাছের সাথে চাষ করা হচ্ছে সবজিও। মাটি ছাড়াই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতির মাধ্যমেই অর্গানিক নির্ভেজাল মাছ ও সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই। যা ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলাকায়।

রুনা বেগম জানান, তিনি শতফুল বাংলাদেশ নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার সদস্য। তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে একটি চৌবাচ্চা তৈরী করেছেন। অবকাঠামো নির্মাণসহ পুরো প্রকল্প তৈরীতে ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, মাছ চাষে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৩৩ দিনের মাথায় ২৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রথম চালানে তাদের ১৩ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আর সেখানে কিছু সবজি চাষ করা হয়েছিল। সেগুলো বাড়িতে খেয়েছি।

রুনা বেগম আরও বলেন, আমার ছেলের ছোটবেলা থেকেই মাছ চাষে ঝোক। কিন্তু আমাদের কোন পুকুর নেই। ছেলের ইচ্ছা পুরনে শতফুলে সদস্য হয়ে সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছি এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতির উপর। ছেলেও সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর পর আমরা মা ছেলে মিলে মাছ ও সবজি চাষ করছি।

আমাদের এই মাছ ও সবজি চাষের পদ্ধতি দেখে প্রতিবেশী রুকসানা ইয়াসমিন নামের আরেকজন শতফুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তিনি বাড়ির ছাদে এটি করছেন বলে জানান রুনা বেগম।

শতফুলের মৎসব কর্মকর্তা রনি হোসেন বলেন, এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে চাষ ও সবজি চাষে প্রয়োজন একটি চৌবাচ্চা, এয়ার হিটার, পাম্প এবং ছোট ছোট ট্রে। চৌবাচ্চায় মাছ ও ট্রে-তে ইটের খোয়ায় বীজ রোপণ করে সবজি চাষ হচ্চে। মাছের ট্যাংকের পানি পাম্পের মাধ্যমে ট্রে-তে ফেলা হয়। সেই পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ভেঙে খাদ্য উপযোগী করে এবং পানি দূষণমুক্ত করে পুনরায় মাছের ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। ফলে সাশ্রয় হয় সার ও পানি উভয়ই।

শতফুলের পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারের পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় গ্রামাঞ্চলে এ্যাকুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে শতফুল। এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক মুক্ত মাছ ও সবজি উৎপাদন হওয়ায় এর প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়ছে। চাহিদা বাড়ছে রাসায়নিক মুক্ত মাছ ও সবজির।

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক ইঞ্চি জায়গাও ফেলে রাখা যাবে না; প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে এ্যাকুয়াফনিক্স প্রদ্ধতি। একই সঙ্গে রাসায়নিকযুক্ত শাকসবজি ও মাছের ব্যবহারে বাড়তে থাকা স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে