বরেন্দ্রে রোপা-আমন চাষে পুরোদমে মাঠে কৃষক

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৩; সময়: ১২:৫২ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্রে রোপা-আমন চাষে পুরোদমে মাঠে কৃষক

আব্দুল বাতেন: রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে রোপা-আমন ধান চাষের আবাদ। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির দেখা এবং এই মাসের মাঝামাঝিতে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ায় আউশের আবাদ শেষ করেই এই অঞ্চলের কৃষকরা রোপা-আমন ধান লাগানোর প্রস্তুতি শুরু করে।

সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাঠে পুরোদমে আমন ধান লাগানো শুরু করেছে বলে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার রোপা-আমনের ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর। গতবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিছে অর্জিত হয়েছিলো ৮০ হাজার ৮৩ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ হেক্টর বেশী আবাদ হয়েছিলো।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকরা আষাঢ়ের শুরুতেই রোপা-আমন ধান লাগানোর কাজ শুরু করে। এছাড়াও জেলার তানোরসহ নওগাঁ,নাটোর, চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলায় ধান লাগানোর কাজ শুরু করেছে। ঘনঘন আষাঢ় মাসের বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। আমন ধান চাষে বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি কিনে সেচ দিয়ে হয়া না ফলে খরচও কম হয়। তাই বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে কৃষকরা আমন চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন।

গোদাগাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এবার উপজেলায় রোপা-আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৩ হেক্টর। গতবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ৫ হেক্টর বেড়ে গিয়ে ২৪ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিলো।

ধানচাষ শুরু হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা আবাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট আছেন। করণ হিসেবে জানাগেছে, দিনে দিন লেবারের দাম বৃদ্ধি, সার-কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়া সেই সাথে ধান উঠার সময় ধানের উপযুক্ত দাম না পাওয়া।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক ইব্রাহীম বলেন, আষাঢ় মাসের শুরুতেই বৃষ্টি দেখা দেওয়ায় আমাদের অঞ্চলে পুরোদমে আমন ধান লাগানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টিতে এই ধান লাগতে সুবিধা হয়। তুলনামূলক ভাবে খরচ কম হয়। তবে তিনি এবার ধান চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার ধানের জমির লেবারের দাম ও সারের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খরচ বেশী হচ্ছে। যে লেবারের দাম গত বছর সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে ছিলো সেটি এবার বেড়ে গিয়ে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকাও পর্যন্ত হয়ে গেছে। এছাড়ও ধান উঠার পর পর্যাপ্ত দাম পাওয়ায় ধান চাষে আর্থিক ক্ষতি হয় বলে জানান এই কৃষক।

রামনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন এলাকায় পুরোদমে রোপা-আমন ধানের আবাদ চলছে জানিয়ে বলেন, এবার ৯বিঘা ধান আবাদ করছি। লেবার সংকট হওয়ায় তাদের ডিমান্ড বেড়ে গেছে। বিঘা চুক্তিতে কারো কাছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন। গতবার এরচেয়ে লেবার খরচ ১০০ টাকা কমছিলো।

বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান,অন্য বছরে বৃষ্টির অভাবে আষাঢ়ের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও আমন চাষ শুরু করতে পারেনা। এবার বৃষ্টি বেশি হওয়াই অগ্রিম আমন চাষে নেমেছেন কৃষকেরা। আমন চাষে সেচ খরচ লাগে না। সার খরচও কম। বর্ষার পানির উপর নির্ভর করে আমন চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এ বছর অগ্রিম বৃষ্টি তাই দেরি না করে আমন চাষে নেমে পড়েছেন তারা।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় রোপা-আমন ধান চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৩ হেক্টর ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা আশা করা যায় অর্জিত হবে। প্রতিবছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও আবহাওয়া অনুকুলে থাকা এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ পুরোদমে চলছে কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন বলেন, আষাঢ়ে বৃষ্টি পর্যাপ্ত হওয়ায় এই অঞ্চলে বোরো-আমন ধানের আবাদ শুরু হয়েগেছে। আশা করা যায় রাজশাহী অঞ্চলে ধানের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে