রাজপথ দখলের লড়াইয়ে বড় সংঘাতের শঙ্কা

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৩; সময়: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ |
রাজপথ দখলের লড়াইয়ে বড় সংঘাতের শঙ্কা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের বড় দুই দল যার যার এক দফা নিয়ে এখন বলতে গেলে পুরোপুরি মাঠে নেমে গেছে। ফলে এরই মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ আর মামলা শুরু হয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না করে রাজপথে ফয়সালা হয়, তার ফল হবে ভয়াবহ।

১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি এক দফার কর্মসূচি দেয়। তাদের এক দফা হলো সরকারের পতন। সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। একই দিনে শাসক দল আওয়ামী লীগও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এক দফা ঘোষণা করে। তাদের এক দফা হলো শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন।

এরপর ১৮ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা আর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভা যাত্রার দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কোনোটা ছিল আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি। আবার কোনোটা ছিল ত্রিমুখী। সেসব জায়গায় দুই দল এবং পুলিশ সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের একজন সদস্য এই সংঘাতে নিহত হন। পরের দিনও বিএনপির পদযাত্রা এবং আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়।

শনিবার ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যাানে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগও সারাদেশে তারুণ্যের জয়যাত্রা নামে কর্মসূচি পালন করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরই মধ্যে বলেছেন, সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই, তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করলে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।

বিএনপি এখন টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের দখল শক্ত করতে চায়। আর সেজন্য তারা শুধু বিএনপি নয়, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছে। সমমনা ৩৭টি দলকে মাঠে আরও সক্রিয় করতে চাইছে। সমমনা দল আরও বাড়াতে চাইছে।

অন্যকে আওয়ামী লীগও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবে। তাদের টার্গেট এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থেকে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করা। আর বিএনপির টার্গেট এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে না দেওয়া।

বিদেশিদের তৎপরতায় এখন পর্যন্ত দুই দলকে সংলাপে রাজি করানো যাচ্ছে না। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে সংলাপের আশা আপাতত করা যাচ্ছে না। তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য যাদের প্রতিনিধির সঙ্গেই কথা বলুন না কেন, যার যার এক দফাই তুলে ধরছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এস কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মাঠে নেমেছি। নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবো। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করে তারপর আমরা ঘরে উঠবো। বিএনপি চাইলেও কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। দেশের মানুষ তাদের প্রতিরোধ করবে।’

তার কথা, ‘২০১৩ সাল থেকে বিএনপি রাজপথে আছে। অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ঘরে চলে গেছে। মির্জা ফখরুলও ঘরে চলে যাবে। মির্জা ফখরুল তারেক জিয়ার নির্দেশে একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর জবাব জনগণ দেবে।’

এর জবাবে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা ধ্বংসাত্মক কাজ না করতেই তো আমাদের নেতৃবৃন্দকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে। কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না। এগুলো স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের কাজ। আমরা এই দমন-পীড়ন উপেক্ষা করেই আন্দোলনের মাঠে থাকবো। আমাদের জয় হবেই।’

তার কথা, ‘সরকার এখন নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু এই হুমকিতে কোনো কাজ হবে না। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে যদি রক্ত ঝরে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয় তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। ওবায়দুল কাদেরকে নিতে হবে। এই দায় আওয়ামী লীগের। তার জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা ধরে আছে। জনগণ হলো রাষ্ট্রের মালিক। তাদের মালিকানা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন,‘রাজপথে সমাধান অনেক ক্ষতি ডেকে আনে। আমরা অতীতে তা দেখেছি। তাই প্রকাশ্যে না হলেও পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এর নানা ধরনের পরিণতি হতে পারে। ২০০৬ সালের মতো একটা ভিন্ন ধরনের সরকারও চলে আসতে পারে। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেও একটি পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। সংঘাত আরও বাড়বে, নয়তো অন্য কোনো শক্তি সুযোগ নেবে। আগে আমরা তো এরকমই হতে দেখেছি।’

তবে তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির একটা গ্লোবালাইজেশন হয়েছে। অতীতে এমন কখনো দেখা যায়নি। এখন বাইরের দেশগুলো কতটা রোল প্লে করে তা দেখার আছে। আমরা তো সব কিছু জানি না। আর রাজনৈতিক নেতারা সবকিছু বলেন না। বাইরে যা বলেন ভিতরে হয়তো অন্যকিছু হচ্ছে। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে