একজন বাঙালি উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহাপুরুষ
বদিউল আলম লিংকন : মনি নামে একজন বাঙালি যুবক; যার জীবনে অত্যন্ত মোটিভেশন এবং সফলতার গল্প রয়েছে। মনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী নেতা হয়ে ওঠার যাত্রা তার ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব, সততা এবং দূরদর্শিতার প্রমান। তিনি দৈহিক ও মানসিক ভাবে সাহসী ব্যক্তি। তার জন্ম ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ সালে ভারতের কলকাতায়। তিনি একটি বিশিষ্ট পরিবারে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার সাথে বেড়ে ওঠেন। পাঁচ বছর বয়সে তার পিতা প্রথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। এই ঘটনা তার পরিবারকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়, তাও এমন একটি সময়ে যখন মনি খুব ছোট। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি ভাই-ভাবিদের সংসারে বেড়ে উঠেছেন। মা শরীফা আলী বাবার অভাব বুঝতে দেননি। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মনি চতুর্থ।
মনির পরিবারের সবাই খুব স্বাধীনচেতা হলেও সবাই সহজ-সাধারণ জীবনধারায় বিশ্বাসী। তাদের জীবনের মূল প্রেরণা জ্ঞান ও দর্শনচর্চায়। তার মনে হতে থাকে, শুধু সাধারণ জীবন ধারণ নৈতিকতার পরিচয় বহন করতে পারে- এটি একটি ভুল ধারণা এবং বলা যেতে পারে, এখান থেকেই সে এ ধারণাকে ভুল প্রমাণের জন্য কিছুটা বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। সেই বিদ্রোহ থেকেই আজ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহাপুরুষ হয়ে উঠেন।
তাঁর বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী (১৮৮৭-১৯৪৬) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৩৩ সালে। তিনি নীতিতে এবং ন্যায়বিচারে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তার এক যুগ পর তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেয়।
মনি’র বড়ভাই এসএ মাসুদ যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন এবং তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসাবে যোগদান করেন। বাবার মতো তিনিও ১৯৭৭ সালে পশ্চিম বাংলার প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তার মেজভাই এসএ মওদুদ বিলেত থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। সেজোভাই এসএ মনসুর ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এমন একটি পরিবারের পরিক্ষিত সন্তানকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূণ গুরুদায়িত্ব দেয়া হলে রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন ভুল হবে না।
মনি কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাঠ শেষ করেন। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন তিনি।
১৯৬২ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করার পর, মনি প্রাথমিকভাবে একজন সিএসপি (পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস) অফিসার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। যাইহোক, একজন প্ররোচিত পারিবারিক বন্ধু তাকে একটি কর্পোরেট ক্যারিয়ার অনুসরণ করতে রাজি করান।
উল্লেখ্য, সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে গড়ে ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে ডিস্টিংশনসহ ‘সপ্তম’ হয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও মনিকে একজন মোটিভেশনাল স্পীকারও বলা যায়।
১৯৬৫ সালে মনি পাকিস্তান টোব্যাকো কোম্পানিতে ম্যানেজমেন্ট প্রবেশনার অফিসার হিসাবে তার কর্পোরেট যাত্রা শুরু করেন। মনির চাকরি ভালো লাগত না কখনোই। ব্যবসার আকাঙ্ক্ষা ছিল ছাত্রজীবন থেকে। তাই ভালো চাকরি করলেও ব্যবসা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। অন্যদিকে কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সততা, কঠিন পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছে মনি প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ চাকরি-সংক্রান্ত সুবিধা বাড়তে থাকে। ১৯৬৬ সালে তিনি জয়পুরহাটের সাংসদ মফিজ চৌধুরীর মেয়ে নিলুফারকে বিয়ে করেন। স্ত্রী নিলুফার সানবীমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ ছিলেন। করাচিতে শুরু করেন কর্মজীবন। ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বদলি হন ঢাকায়। মাঝে কয়েক মাসের জন্য কর্মস্থল ছিল বিলেত।
১৯৭১ সাল, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মনির শ্বশুর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই পাকিস্তানি হানাদারদের নির্যাতনও তাঁদের ওপর বেশি। অনেকটা নিরুপায় হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ে লন্ডন চলে যান তিনি। সেখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায় মনি ও তাঁর পরিবারের। অন্যদিকে, লন্ডনের বড় একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগও হয় তাঁর। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে থাকতে রাজি ছিলেন না মঞ্জুর এলাহী। উচচ বেতনের চাকরি, বাড়ি-গাড়ি, প্রাচুর্য, নিশ্চিত জীবন সব ছেড়ে ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর ফিরে আসেন পরিবার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে।
শ্বশুর তখন মন্ত্রী। মনি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকায় মিন্টো রোডে শ্বশুরের বাসায় উঠতেন। ১৯৭২ সালের মে/জুন মাসে একদিন শ্বশুর মফিজ চৌধুরী তাঁর বাসায় লিহাই ইউনিভার্সিটি বন্ধু এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি সঞ্চয় সেন ও অন্য সফরসঙ্গীদের নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে মনি উপস্থিত ছিলেন। পার্টিতে এক ফরাসি ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি এগিয়ে এসে মনির সঙ্গে কথা বললেন। জিজ্ঞেস করলেন, কী করো। মনি চাকরির কথা তাকে জানালো। জিজ্ঞেস করলো মনি, তিনি কী করেন। জানালেন, আমদানি-রপ্তানি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তিনি বললেন, চামড়া আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করি। তুমি কি জয়েন করবে? আমি তাকে না করে জানালাম, যেহেতু ভালো সংস্কার সঙ্গে কাজ করছি, সে জন্য এই মুহূর্তে অন্য চাকরির দরকার নেই। তিনি মনির ভুল ভাঙিয়ে বললেন, ‘না না। আমি তোমাকে চাকরি অফার করছি না। তুমি আমার লেদারের পণ্য যা বিক্রি করবে, তার থেকে একটা কমিশন পাবে। আর তুমি এখান থেকে যেসব চামড়া ক্রয় করবে, তার ওপর একটা কমিশন পাবে। তুমি কি আগ্রহী?’ পরে হিসাব করে মনি দেখলো, বেশ বড় একটা পরিমাণ টাকা মাস শেষে হাতে চলে আসছে।
তবুও যেহেতু নতুন কিছু একটা করার যুক্তিতে এটা বেশ বড় একটা সিদ্ধান্ত, তাই চিন্তা করতে একটু সময় চেয়ে নিলেন মনি। যখন স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করলো, সে (স্ত্রী) বলল, মাথা খারাপ! তুমি ব্যবসার কী বোঝো? মনির বড় ভাই হুমকি দিলেন, তুই যদি যাস এটাতে, তোর সঙ্গে জীবনে কথা বলব না, আর। তখন যে মানুষটা মনিকে অনেক সাহায্য করলেন, তিনি তার শ্বশুর। বললেন, না বাবা, তোমাকে এ ব্যাপারে সমর্থন করি। সে সময় এটাই অনেক সাহস জোগায় মনিকে। দামি গাড়ি ছেড়ে উঠলেন রিকশায়। চামড়ার ভাঁজে খুঁজে নিলেন নতুন এক অধ্যায়। তিনি জানতেন যে, এটিই হবে তার প্রথম এবং শেষ কাজ কারণ তিনি শীঘ্রই উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে অগ্রসর হবেন। উচ্চ পদে, মাইনেও বেশ, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও অনেক, তারপরও অভিজাত নিশ্চিত জীবন ছেড়ে মনি বেছে নিলেন দুর্গন্ধময় হাজারীবাগ।
১৯৭২ সালে মনি একজন ফরাসি ব্যবসায়ী রেমন্ড ক্লারিকের সাথে দেখা করেন, যিনি ট্যানারি রাসায়নিক এবং চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। রেমন্ড প্রস্তাব করেন যে মনি ঢাকায় তার এজেন্ট হন, উভয় ব্যবসা পরিচালনা করেন। যদিও এই সুযোগটি মনিকে কৌতূহলী করেছিল, এটি তার পরিবারের, বিশেষ করে তার স্ত্রীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী ড. মফিজ চৌধুরী তার শ্বশুরের সহায়তায় মনি তার স্ত্রীকে এই সাহসী উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য রাজি করান। এর মাঝে এক-দু’বার মনি ভাইদের বলেছিলেন, ব্যবসা করতে চাই। এতে তারা টিটকারি করছিল আর হেসে বলেছিল, তুই ব্যবসার কী বুঝিস? ব্যবসা করবি? আমাদের চৌদ্দপুরুষের কেউ ব্যবসা করেনি।
১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিজের ৩০তম জন্মদিনে মনি চাকরি ছাড়লেন এবং উদ্যোক্তা হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেন। তিনি একজন এজেন্ট হিসাবে শুরু করেছিলেন কিন্ত শীঘ্রই উৎপাদন খাতে আরও উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা চেয়েছিলেন। শুরু হয় তরুণ মনি’র নতুন পথচলা। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ওয়েট-ব্লু চামড়া সরবরাহ করতেন এজেন্সিকে। একই সঙ্গে তাদের আমদানীকৃত রাসায়নিক দ্রব্য বাংলাদেশে বিক্রি করা ছিল মনির ব্যবসা। জাপানি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মিজুজে ছিল চামড়ার প্রথম ক্রেতা। ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকল। হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করেও অচিরেই মনির ব্যবসা বাড়তে থাকে।
৭৫-এ বড় দুর্ঘটনাটা ঘটল। সরকার পরিবর্তন হলো এবং ওই সরকার তখন চামড়া খাতকে বেসরকারি করে ফেলল। ওরিয়েন্ট ট্যানারিকে তখন নিলামে তোলা হলো। ওই সময় ১৪ টাকায় এক ডলার পাওয়া যেত। ১২ লাখ ২২ হাজার ডলারে ট্যানারিটি কিনে নেন উদ্যোক্তা মনি। যেটা ১৯৭৫ সালে অনেক টাকা ছিল। এভাবেই চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লো মনি। লোকসানি প্রতিষ্ঠান কিনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে মনি। ওরিয়ন ট্যানারির নাম পরিবর্তন করে অ্যাপেক্স ট্যানারি করা হয়। ততকালিন সময় আন্তর্জাতিক বাজারে শুধু চামড়া রফতানি হতো। চামড়ার মূল্য সংযোজিত বা প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজারে কোনো অস্থানই ছিল না বাংলাদেশের। মূলত ব্যক্তি খাতের অংশগ্রহণই এ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন মনি।
আপনারা ইতিমধ্যে হয়তো অনুমান করেছেন কে এই মনি? তার পুরো নাম কি? হ্যাঁ তিনি বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রতিক, একজন বাঙালি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ মনজুর এলাহী (এখানে মনি নাম উপস্থাপন করা হয়েছে)।
২০০০ সালে, অ্যাপেক্স খুচরা ব্যবসায় উদ্যোগী হয় এবং প্রভাব বিস্তার করে। অ্যাপেক্স গ্রুপে তার ভূমিকার বাইরে মনি বাংলাদেশের একজন উদ্যোক্তা ও নেতা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে তার প্রভাব আর্থিক খাতে প্রসারিত হয়। বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যান এবং এমটিবি বোর্ড নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান তিনি।
সৈয়দ মনজুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি), পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, এমটিবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের এমটিবি বোর্ড এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব¡ পালন করেছেন। তিনি এলাহী এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের একটি নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠন এবং আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স (AmCham), বাংলাদেশ এবং “বিজনেস এক্সিকিউটিভ অফ দ্য ইয়ার ২০০০” সহ বাণিজ্য ও শিল্পে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার জিতেছেন। ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস দ্বারা স্পনসর করা “বিজনেস পারসন অফ দ্য ইয়ার ২০০২” পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
তিনি বর্তমানে এপেক্স ট্যানারি লিমিডেট, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিডেট, এপেক্স ফার্মা লিমিডেট, ব্লু ওশান ফুটওয়্যার লিমিডেট, এপেক্স এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, এপেক্স ইনভেস্টমেন্টস লিমিডেট, গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং (বাংলাদেশ) লিমিডেট, কোয়ান্টাম কনজিউমার সলিউশনস লিমিডেট, মনুষ্যজন ফাউন্ডেশন, সানবিমস স্কুল লিমিডেট চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীন কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থনা পরিচালক, বাংলাদেশ লিমিটেডের ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি (CRAB), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (CDBL) এর পরিচালক, পূর্ব পশ্চিমের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।
এর আগে, সৈয়দ মনজুর এলাহী বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর চেয়ারম্যান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশনের (ইডব্লিউইউএফ) চেয়ারম্যান, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেডের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোম্পানি (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বোর্ডের পরিচালক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক, বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই), সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমসিসিআই) (BEA), ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (DUAA) সভাপতি এবং বাংলাদেশে বেলজিয়ামের অনারারি কনসাল ছিলেন।
তিনি মনে করেন, উদ্যোক্তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ব্যাংকার। কোনো অবস্থাতেই ব্যাংকারকে অখুশি করা যাবে না। সে জন্য উদ্যোক্তা যারা আছেন, মনে রাখবেন, ব্যাংকাররা আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আর যেভাবেই হোক, ব্যাংকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। আর আপনার পেছনে যদি একটা ব্যাংকার থাকে, জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়।
সৈয়দ মনজুর এলাহীর প্রভাব শুধু ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি হওয়ার পাশাপাশি, তিনি নেতৃত্বের গুণাবলী, পেশাদারিত্ব এবং নির্দলীয়তার জন্য ১৯৯৬ এবং ২০০১ উভয় সময়ে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখেন। তার রোল মডেল হিসেবে, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকে তার নেতৃত্বের ভিত্তি হিসেবে জোর দেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও তিনি।
বয়সের হিসাবে জীবনের শেষবেলায় এসেও মানুষটি মনেপ্রাণে বেশ তরুণ। জীবন নিয়ে সৈয়দ মনজুর এলাহীর কোনো আফসোস নেই। সৈয়দ মনজুর এলাহী (ডাক নাম মনি) একজন দৈহিক এবং মানসিকভাবে সাহসী ও উদ্দীপক ব্যক্তি, এবং তার অসাধারণ যাত্রা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও সামাজিক সার্থকতার উন্নতির জন্য একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তার উদ্যোক্তা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী এবং তিনি বিভিন্ন সংস্থা এবং সামাজিক কর্মে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিবার পরিস্থিতির উন্নতির দিকে একটি সশস্ত্র সহায়ক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ স্থাপন করে।
লেখক- বদিউল আলম লিংকন, জেএভিপি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক