বেকারত্বের হার ৩.২ এখন নামমাত্র : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৩; সময়: ১:৪৪ অপরাহ্ণ |
বেকারত্বের হার ৩.২ এখন নামমাত্র : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশকে বিশ্বে ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আমরা সৃষ্টি করেছি। আমাদের বেকারত্বের হার এখন ৩.২ শতাংশ। সেটা খুবই নামমাত্র। আমরা কাজ করার অনেক সুযোগ তৈরি করেছি।

শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রপ্তানি ও আমদানি অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যদি কোভিড-১৯ না হতো, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কিংবা স্যাংশন না হতো তাহলে আরও ২ শতাংশ দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে আনতে পারতাম।

অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ দশমিক ৫ ভাগ, সেটা আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। সেই সঙ্গে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। এভিয়েশন খাত আরও উন্নত হোক। আমরা বাংলাদেশে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি এটুকু বলতে পারি, অতীতে আর কোনো সময়ে এভিয়েশন খাতে এত উন্নয়নের পদক্ষেপ কেউ নেয়নি।

১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল এবং ২০০১ থেকে ২০০৭/০৮ সাল পর্যন্ত এই ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেউই দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যেতে পারেননি।

তবে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই মানুষের সুবিধার জন্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মানুষের ভেতরে একটা আত্মমর্যাদা বোধ তৈরি করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদাই না, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। গত ১৪/১৫ বছর ধরে সরকার অনেক উন্নয়ন করে যাচ্ছে।

মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ১০ কোটি মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে কোনোমতেই তারা কষ্টে না থাকে। সে ব্যবস্থা আমরা করছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সারা বিশ্ব আজ চিন্তিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডেল্টা প্লান ২১০০ তৈরি করেছি। ২০০৮ এর নির্বাচনে ইশতিহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২১।

২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। সুবর্ণজয়ন্তিতে আমরা পেয়েছি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। যে দেশটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের পর মাত্র তিন বছর সাত মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছিল।

যেখানে একটা টাকা রিজার্ভ ছিল না। এরপর ২১ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে।

‘২০২১-২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ২০৪১ এ বাংলাদেশ এখন কেমন হবে। সরকার হবে স্মার্ট সরকার, অর্থনীত হবে স্মার্ট অর্থনীতি। এজন্য আমরা স্মার্ট দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলবো। সোসাইটি হবে স্মার্ট। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া আমাদের লক্ষ্য, আমরা এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

গ্রামের মানুষকেও অবহেলা করা হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আট লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে বিনা পয়সায় দুই কাঠা জমিতে আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। যাদের নিজের ঘর বাড়ি, ঠিকানা ছিল না। জাতির পিতার জন্মভূমিতে কোনো মানুষ ঘরহীন, ভূমিহীন থাকবে না।

পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর।

নতুন এ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগের জন্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি ও ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো অত্যাধুনিক তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া করা হয়েছে। রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং অড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ।

যাত্রীদের স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের ১৬টি রেগুলার ব্যাগেজ বেল্ট থাকবে টার্মিনালটিতে। অতিরিক্ত ওজনের (ওড সাইজ) ব্যাগেজের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আরও চারটি পৃথক বেল্ট।

অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন)। এগুলোতে নিজের পাসপোর্ট এবং টিকিটের তথ্য প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে বোর্ডিং পাস ও সিট নম্বর। এরপর নির্ধারিত জায়গায় যাত্রী তার লাগেজ রেখে দেবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লাগেজগুলো এয়ারক্রাফটের নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে।

তবে নির্ধারিত ৩০ কেজির বেশি ওজনের ব্যাগেজ নিয়ে এখানে চেক-ইন করা যাবে না। সেসব যাত্রীদের জন্য আরও ১০০টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে এ টার্মিনালে।

টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।

এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে