ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তরুণদের দায়িত্ব এবং জাতির ভবিষ্যত

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৩; সময়: ১০:২১ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তরুণদের দায়িত্ব এবং জাতির ভবিষ্যত

এস এম বদিউল আলম : তারুণ্য যেকোনো জাতির উদ্যমী শক্তি। পুরোনোকে ভেঙে নতুন কিছু করাই তারুণ্যের ধর্ম। স্বভাবতই তরুণেরা নিজেদের চিন্তাভাবনা সবার সামনে উপস্থাপনের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ও অবস্থার জানান দিতে চান। বর্তমানে কম সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে নিজেকে তুলে ধরার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ফলে মুহূর্তেই যেকোনো বার্তা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা লক্ষণীয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ-সবাই এখন ভাইরাল শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। ভালো কাজের মাধ্যমে ভাইরাল কিংবা সবার কাছে পরিচিত হওয়া দোষের কিছু নয়, বরং প্রশংসার দাবিদার।

তবে যদি কোনো কাজের মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয়ের শঙ্কা থাকে, তা উদ্বেগজনক। একইভাবে বর্তমানে তরুণদের ভাইরাল নামক অসুস্থ প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতা তথা দেশের সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দিন যতই যাচ্ছে, তা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ভাইরাল হতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো যোগ্যতা কিংবা বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।

প্রত্যেক মানুষ সমাজে তার অবস্থান জানান দিতে চায় এবং সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, ব্যক্তিগত ছবি, অনুভূতি ও সাফলতার গল্প শেয়ার করি। এতে আমাদের প্রতি অনেকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। বর্তমানে লিখিত লেখাগুলি ছাড়া, ভিডিও সম্প্রচার এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি নতুন সময়ের জীবনধারা, জ্ঞান ও মনোভাব বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এছাড়া ভিডিও ব্লগিং থেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু গ্রামের কৃষক পর্যন্ত ভিডিও ব্লগিংয়ের সঙ্গে জড়িত।

ফেসবুকে রিলস নামে স্বল্প সময়ের ভিডিও ফিচার যুক্ত হয়েছে। শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কিংবা পারিবারিক দৈনন্দিন কাজ ভিডিও আকারে ধারণ করে প্রচার করছে। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে-এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

তবে ভাইরাল হওয়ার নেশায় তরুণেরা অপসংস্কৃতি দিকে ঝুঁকছেন। ফলোয়ার আর ভিউয়ের নেশায় ভিডিওতে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীলতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। এসব দেখে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন অনেক তরুণ, আসক্ত হচ্ছেন ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলস্বরূপ, তরুণদের উন্নত রুচিসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবর্তে নিচু মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগই এখন তরুণ। যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যার হিসাবে, তরুণ জনগোষ্ঠী এখন ৪ কোটি ৫৯ লাখ। নিঃসন্দেহে তরুণেরা আমাদের দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তাই ভাইরাল হওয়ার এ সংস্কৃতিকে তুচ্ছ বিষয় হিসেবে অবহেলা করার সুযোগ নেই। দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, এটি যেমন সত্য, তেমনি তরুণদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না, এটিও বাস্তবতা।

তরুণদের দায়িত্ব এবং জাতির ভবিষ্যত

তরুণদের প্রতি আমি একটি মহত্ত্বপূর্ণ উপদেশা দিতে চাই। ভাইরাল হওয়ার প্রচেষ্টা নিজের জন্য মাত্র না, বরং জাতির জন্যও জুড়ে উন্নতি করার লক্ষ্যে করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগের পারমাণবিক প্রকৃতি তথা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার আমাদের একাধিক লাভবান হতে পারে। তবে, এই সুযোগটি দুর্ভাগ্যকর ভাবে ব্যবহার করলে সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

তরুণদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজের ভালোবাসা, সম্মান, বৃদ্ধি এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে পারবো এই লক্ষে প্রকৃতির সাথে মিলে চলতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত আমাদের হাতে। তাই আমরা ভাইরাল হওয়ার প্রচেষ্টা করতে পারি, কিন্তু তা কেবলমাত্র স্বার্থ নিয়ে না, বরং আমাদের সমাজ এবং জাতির উন্নতির জন্য করতে হবে।

সমাজের ভালোবাসা, সম্মান এবং বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা একজন সামাজিক দাতা হিসেবে প্রকাশ পাওয়া যেতে পারি।
আমরা সবাই মেধাবী, সৃজনশীল এবং দৃঢ় আত্ম-বিশ্বাসী হতে পারি। আমাদের দায়িত্ব হলো নিজেদের স্বার্থ প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং জাতির জন্য কিছু ভালো করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা করা। আমরা সবাই একটি সক্ষম জাতি হিসেবে পরিণত হতে পারি এবং আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে