রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগের ভাঙচুর, দুই সাংবাদিক আহত

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৩; সময়: ১১:৩৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগের ভাঙচুর, দুই সাংবাদিক আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগে ভাঙচুর চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত দুজন হলেন- রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি আবু সাইদ রনি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও রাজশাহী পোস্টের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল আলীম। রনি বুকে ব্যথা পেয়েছেন। তাকে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর আলীম বাম হাতে আঘাত পেয়েছেন। তিনি আছেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাঈদ হাসান আশিক, মো. সাহেদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সজিব, সাজেদুর রহমান সিজার, মো. মেহেদী, আবদুর রহিম, মো. জাকারিয়া ও সাব্বির হোসেন এ হামলা চালিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল খালেক জানান, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে কোনো বিভাগেই ইন-কোর্স পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকেও বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসুদ রানা তার কাছে এসেছিলেন পরীক্ষা দেওয়ার দাবি নিয়ে। তিনি তাকে বুঝিয়ে পাঠান যে, একজনকে পরীক্ষা দিতে দিলে সবাইকে এ সুযোগ দিতে হবে। তাই এটা করা যাবে না।

এরপর অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানা অন্যদের ডেকে নেন। তারপর তারা গণিত বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ফুলের টব ভাঙচুর করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নিজে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এ সময় খবর পেয়ে সাংবাদিকরা এসে ভাঙচুর করা ফুলের টবের ছবি তুলছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে আহত দুই সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অধ্যক্ষ জানান, হামলাকারীরা সাংবাদিকদের তিনটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে তারা ফেরত দিয়েছে। এ সময় একটি মোবাইল ফোন ভাঙা পাওয়া গেছে। আছড়ে ফেলে ফোনটি ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যাপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার থাকলে সেটা একাডেমিক কাউন্সিলের সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে।

রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, আমাদের সহকর্মীদের ওপর আঘাত এসেছে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।

রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফর বলেন, পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কেউ থাকতে পারেন। এ রকম কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় দুই সাংবাদিক আহতের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)।

সন্ধ্যায় আরইউজের সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিকরা কোনো দল বা গোষ্ঠীর না। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠ স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপরও চরম আঘাত।

বিবৃতিতে আরইউজে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আমরা এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিনন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে সঠিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে