প্রযুক্তি পণ্য আমদানি নয়, রপ্তানিতে চোখ জয়ের

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩; সময়: ২:৩৮ অপরাহ্ণ |
প্রযুক্তি পণ্য আমদানি নয়, রপ্তানিতে চোখ জয়ের

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগান ঠিক করেছে, সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রযুক্তি পণ্য আমদানি নয়, রপ্তানি করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর প্রধান সজীব ওয়াজদ জয়।

শুক্রবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ‘লেটস টক’অনুষ্ঠানের ৫১তম পর্বে তরুণদের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দেন তিনি।

স্মার্ট বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পার্থক্য কী? স্মার্ট বাংলাদেশ তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী ভূমিকা রাখবে? সেই বাংলাদেশ থেকে কী পাবে মানুষ? এরকম নানা প্রশ্নের জবাব দেন সিআরআই চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, “এখন আমরা ডিজিটালাইজড করা নিয়ে চিন্তা করছি না, বরং ভাবছি কোন কোন ক্ষেত্রকে আমরা পরিবর্তন করব, আরও আপগ্রেড করব।

“যেমন আমরা টার্গেট করেছি এআই এক্সপার্টিজ তৈরির। আমরা এআই তৈরি করব, যা নিজেদের কাজে ব্যবহার করব, সেটা সরকারি কাজে কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে।”

জয় বলেন, “আমরা যখন শুরু করি, তখন মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ছিল না, সরকারি কোনো কিছুই ডিজিটাল ছিল না।

“ডিজিটালের টার্গেট ছিল, প্রথমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানাতে হবে। সেটা আমরা করে ফেলেছি। এখন সবার হাতেই দেশ জুড়ে ফোরজি ইন্টারনেট আছে, প্রতিটি ইউনিয়নে এখন ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। আপনাদের সবার হাতেই স্মার্ট ফোন রয়েছে। ডিজিটাল হয়ে গেছে। এরপর আমাদের পরবর্তী ধাপে যাবার পালা।”

সরকার গবেষণার ওপর জোর দেবে বলেও জানান সজীব ওয়াজেদ। তিনি বলেন, “এআই বা মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করব। আগে যেসব ইলেক্ট্রনিক্স বাংলাদেশ আমদানি করত, যেমন মাদারবোর্ড, স্মার্ট ফোন বা এ জাতীয় পণ্যগুলো বাংলাদেশ রপ্তানি করবে, এটাই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ” ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন আমরা শুরু করি, সরকারি যত প্রক্রিয়া ডিজিটাইজড করা হয়েছে সে কাজটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোই করেছে। তখন থেকেই আমরা চেষ্টা করছি, কম্পিউটার-মোবাইল কীভাবে বাংলাদেশ স্বল্প খরচে তৈরি করা যায়। এখন ওয়ালটনের মত কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পণ্য উৎপাদন করছে। স্যামসাং এর মত কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রোডাক্ট অ্যাসেম্বল করছে। আমরা কিন্তু স্টেপ বাই স্টেপ আগাচ্ছি।

“স্মার্ট বাংলাদেশে আরেকটি লক্ষ্য রেখেছি যে মাইক্রোপ্রোসেসর ডিজাইনে আমরা যাব। এর অর্থ হল, আরেকটি ভ্যালু চেইন বাংলাদেশেই বানাতে পারব। কিন্তু সেটা অনেক কঠিন। চায়নাও কিন্তু চেষ্টা করে কেবল সেই পর্যায়ে যাচ্ছে, পৌঁছায়নি। আমরা বিশ্বাস করি এখন চেষ্টা করে এখনই করে ফেলব তা নয়, কিন্তু এখন থেকে অন্ততপক্ষে চেষ্টাটা শুরু করলে হয়ত ২০ বছর পর আমরা মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করতে পারব। এটা আমাদের শুরু করতে হবে এবং এটা আমরা শুরু করেছি।”

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এক প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “এআই কিন্তু এখনো সেই স্টেজে যায়নি যে স্টেজে গেলে তা দুনিয়া দখল করে ফেলবে। একেবারেই শেখার একটা পর্যায়ে রয়েছে।

“বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞদের থেকেই এআই নিয়ে আমার মতামত একটু ভিন্ন। আমি মনে করি এআই শুধুমাত্র একটি টুলস। এটি আমাদের চাকরি, কাজ-কর্ম সব দখল করে নেবে এমন নয়। এটা আমাদের নিজেদের জীবনে, নিজেদের টেকনোলজিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত একটি টুল।

“সামাজিক পরিবর্তন বা কৃষি বিষয়ে জানতে ও বিশ্লেষণ করতে এই টুলস টি আমাদের সাহায্য করে। তাই বর্তমানে আমি এআইকে মনে করি একটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় টুলস হিসেবে। আর এ কারণেই স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চারটি বিষয়কে টার্গেট করেছি। তার মধ্যে একটি সেক্টর হল এআই। বাংলাদেশ এআইতে এক্সপার্টিজ ডেভলোপ করবে। এটা একটা লক্ষ্য।”

গবেষণায় গুরুত্বারোপ

সজীব ওয়াজেদ বলেন, “শেখ কামাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট বানানো হয়েছে দেশ জুড়ে গবেষণার জন্যই। গবেষণাকে কেন্দ্র করেই মূলত আমি আইসিটি বিষয়ক পরিকল্পনা করেছি। ভবিষ্যতে যেন আমরাই আইসিটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে পারি এবং টেকনোলজিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে। সেটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হোক বা কোয়ান্টাম কম্পিউটার।”
প্রযুক্তি পণ্য আমদানি নয়, রপ্তানিতে চোখ জয়ের

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়নে যে গবেষণার বিকল্প নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এমআইটি বলেন বা হার্ভার্ড বলেন, তারা এত ভালো করেছে দুর্দান্ত সব গবেষণা কার্যক্রমের কারণে। আমাদেরও গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে, ফান্ডিং বাড়াতে হবে। এমনটা করতে থাকলে নিশ্চয় একদিন আমাদের দেশেও হার্ভার্ডের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় একদিন গড়ে উঠবে।”

দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়াং বাংলা ‘লেটস টক’ শিরোনামে এ আয়োজন করছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও আয়োজন করা হয় লেটস টক যেখানে দেশ নিয়ে তরুণদের ভাবনার কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তরুণদের নিয়ে তার ভাবনার কথাও জানান এই অনুষ্ঠানে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে