বদলগাছীতে নলকূপের ৩৪ ট্রান্সফরমার চুরি, সুযোগে পকেট কাটছে অপারেটররা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩; সময়: ২:৩০ অপরাহ্ণ |
বদলগাছীতে নলকূপের ৩৪ ট্রান্সফরমার চুরি, সুযোগে পকেট কাটছে অপারেটররা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী: নওগাঁর বদলগাছীতে গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস মিলে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে ৩৪ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।

রোপা আমন ধান কৃষক ঘরে তোলার পর মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ও শীতের কুয়াশাছন্ন অন্ধকার রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে তখন বৈদ্যতিক তার কেটে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পোল থেকে খুলে নেওয়া হয় ট্রান্সফরমার। আবার কোথাও কোথাও ট্রান্সফমারের ভিতর থেকে খুলে নেওয়া হয় মূল্যবান তার এবং কয়েল।

এক একটি ট্রান্সফরমার ৫ ও ১০ কেভিএ বিদ্যুৎ ধারণ সম্পন্ন। যার ভিতরে ৯ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত তামার তার থাকে। প্রতি কেজি তামার তারের মূল্য কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ টাকা। ৫ কেভিএ ট্রান্সফরমাররের মুল্য ৪৫ হাজার টাকা এবং ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমারর মুল্য ৬৮ হাজার টাকা। বাজারে চাহিদা এবং মূল্য ভালো থাকায় প্রতি বছর ট্রান্সফরমারর চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গভীর নলকূপের অপারেটররা।

এতে চুরি যাওয়া ৩৪টি ট্রান্সফরমাররের গড়মূল্য ২১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে চলতি ইরি মৌসুমের আগে নতুন ট্রান্সফরমার ক্রয় করে সেচ দেওয়া নিয়ে চিন্তাই পড়েছে কৃষকেরা। তবে কেউ কেউ বলছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে চুরি হচ্ছে এই ট্রান্সফরমারগুলো। এতে করে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে অসহায় কৃষকরা।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক রশিদুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, সোহেল, হারুনসহ ১০/১২ জন কৃষক বলেন, গভীর নলকূপের বেশীর ভাগ জায়গায় সমবায় সমিতি না থাকায় অপারেটর একা নিয়ন্ত্রণ করে। আবার কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। ফলে অপারেটর বা কোন পাহারাদার না থাকার কারণে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার মূল কারণ বলছে তারা। আর ট্রান্সফরমার চুরির অজুহাত দিয়ে সাধারণ কৃষকের পকেট কাটছে কিছু অসাধু অপারেটর। তবে এসব বিষয়ে বরেন্দ্র অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি, এমনটিই বলছে সাধারণ কৃষক ও অপারেটররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু অপারেটরেরা অভিযোগ করে বলছেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে চাইলে বরেন্দ্র অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর সাহেব আমাদের অভিযোগ দিতে নিষেধ করেন।

তবে বেগুনজোয়ার গ্রামের অপারেটর জনি পারিচা গ্রামের শামিম এবং কাদিবাড়ি গ্রামের সুলতান আহম্মেদ বলেন, রাতে ট্রান্সফরমার চুরি হলে সকালেই বরেন্দ্র অফিস এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অফিসে অভিযোগ দিতে গেলে বরেন্দ্র অফিসের জাহাঙ্গীর স্যার বলল, আমাদের কিছু করার নেই। নতুন ট্রান্সফরমারর কিনে নিন। আর পুরাতন ট্রান্সফরমারর আমি সন্ধান পাইলে আপনাদের খবর দিবো সেগুলো কম দামে কিনতে পারবেন। আমি আপনাদের মোবাইলে জানাবো।

বদলগাছী বিএমডিএ’র উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পুরাতন ট্রান্সফরমারর সন্ধান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক চাউল কলের মিল মালিক বিক্রি করতে চেয়েছিলো। তাই আমি ঐ অপারেটর কে বলেছি। প্রয়োজনের থেকে বেশী তো কেউ ট্রান্সফরমারর রাখতে পারে না তাহলে ঐ মিল মালিক ট্রান্সফরমারগুলো বিক্রি করবে কিভাবে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সে ব্যবসা ক্লোজ করবে। এই জন্য সে ট্রান্সফরমারর বিক্রয় করতে চায় বলে তিনি এই উল্টো করে বলেন আপনি বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন।

এ বিষয়ে বদলগাছী পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম আহসান হাবিব বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর অনেক মাঠই ফাঁকা হয়ে গেছে। চোরেরা এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে