কলেজের অবকাঠামোগত অব্যবস্থাপনা এবং ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা
সারওয়ার জামান লিটন : শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে দেশ তত উন্নত। সমাজ পরিবর্তন এর মৌলিক হাতিয়ার হলো শিক্ষা। মেরুদণ্ডহীন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনা ঠিক তেমনি শিক্ষার মেরুদণ্ড যদি মেরুদণ্ডহীন প্রাণীর মতো হয় তাহলে, শিক্ষার অবস্থা ও তাই হবে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য বৃটিশরা প্রথম ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ১৯০৯ সালে। এর পর বাংলাদেশে এখন সরকারি ১৪ টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ গুলোতে তিন ধরনের কোর্স চলমান। প্রথমত বি.এড এক বছর মেয়াদি কোর্স যেটি মাধ্যমিক পর্যায়ের টিচাররা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত বি.এড (সম্মান) যেটি ৪ বছর মেয়াদি কোর্স এবং তৃতীয়ত এম.এড মাস্টার্স কোর্স এক বছর মেয়াদি।
১৯৯৩ সালে প্রথম ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, সম্মান কোর্স চালু করে। এরপর সব কলেজগুলোতে এখন সম্মান কোর্স চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-২০১৬ সেশনে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সম্মান কোর্স চালু করে। এই কলেজটি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহীকে বলা হয় শিক্ষা নগরী। নগরের একদম প্রাণ কেন্দ্র অবস্থিত কলেজটি অনেক আগের একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এই কলেজ এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে।
একটি ভবন খুবি ঝুকিপূর্ণ এবং ক্লাস উপযোগী না। কলেজের সেই টিনসেডের রুমে এখনো বি.এড এবং সম্মান শ্রেণির প্রশিক্ষনার্থী এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে। কলেজে নেই কোনো ওয়াইফাই সংযোগ নেই কোনো সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব যেখানে সম্মান শ্রেণির ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টার পর্যন্ত আইসিটি কোর্স আছে। নেই কোনো সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। নেই কোনো রুচিসম্মত বাথরুম, স্টুডেন্টরা নিত্যদিন দুর্গন্ধকে সঙ্গী করে ক্লাস করে।
কলেজটিকে দেখলে মনে হবে একটি রুগ্ন মানব। যেখানে এই কলেজ এর সামনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়ের সাজে প্রত্যেকটি ভবন আলোকসজ্জা সজ্জিত ছিল। শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল আলোকোজ্জ্বল সেখানে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।
এসডিজি-৪ এ মানসম্মত গুণগত শিক্ষার কথা বলা হয়ে। মানসম্মত গুণগত শিক্ষার আগে মানসম্মত ক্লাসরুম দরকার মানসম্মত পরিবেশ দরকার মানসম্মত ভবন দরকার। তাহলে শিক্ষার উন্নতি সাধিত হবে। আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক আমাদেরও মানসম্মত গুণগত শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। গুণগত শিক্ষা প্রদান করতে পারলে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ গুলো থেকে শিক্ষা বিষয়ে সম্মান কোর্স শেষ করে শত শত শিক্ষাবিদ তৈরি করা সম্ভব।
পরিশেষে শিক্ষা বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ গুলোকে শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় এ পরিণত করবেন
লেখক : মো. সারওয়ার জামান লিটন , বি.এড (সম্মান) ২য় বর্ষ , সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রাজশাহী