জীবন থেকে হারিয়েছে উৎসব-আনন্দ, নানা সংকটে ‘বাঘ-বিধবারা’

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪; সময়: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ |
জীবন থেকে হারিয়েছে উৎসব-আনন্দ, নানা সংকটে ‘বাঘ-বিধবারা’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : জীবন থেকে উৎসব-আনন্দ হারিয়ে গেছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বাঘ-বিধবাদের। জীবিকার তাগিদে স্বামীকে খেয়েছে বাঘ। এখন সমাজের মানুষের কটু কথা আর দায় নিয়ে চলছে বিধবা নারীরা। নীলডুমুর গ্রামের মঞ্জিলা, আমেনা, রাশিদা সবাই বাঘ-বিধবা।

একেকজন যেন দুঃখ আর জীবন যন্ত্রণার ভাণ্ডার। তাদের এই দুঃখ কষ্ট আরও তীব্র হয় যখন সমাজে উৎসব আসে। ঈদ উৎসব তাদের জীবনে এনেছে তীব্র বেদনার পাত্র হয়ে। আর এসব নারীরা সমাজের কাছে অপয়া, শংখুনী, স্বামীখাদক- এমন বাজে মন্তব্য শুনে থাকে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের এসব বাঘ-বিধবাদের কারো স্বামী সুন্দরবনে মধু সংগ্রহকারী মৌয়াল, কাঠ সংগ্রহকারী বাওয়াল বা মাছ সংগ্রহকারী জেলে ছিলেন। বনজীবী এসব স্বামীরা বিভিন্ন সময়ে বাঘের আক্রমণের হতভাগ্য শিকার হয়ে নির্মম মৃত্যুবরণ করেন। সমাজ এই মৃত্যুর দায় জোর করে চাপিয়ে দেয় বাঘের পেটে যাওয়া স্বামীদের বিধবা স্ত্রীদের উপর।

স্বামীর মৃত্যুর দায় তাদের কাঁধে দিয়েই ক্ষান্ত হয় না। স্বামীর বাড়ি বাবার বাড়ি উভয় ক্ষেত্রেই কেউ মেনে নিতে চায় না এ বিধবাদের। এমন কী এলাকায় তাদের দিন মজুরের কাজেও নিতে চায় না সহসা। তাই সন্তান সন্ততি নিয়ে অতিকষ্টে মানবেতর দিনযাপন করছে এ নারীরা। এমন তথ্য জানালেন সাতক্ষীরা মানবাধিকার সংগঠক মাধব দত্ত।

নীলডুমুর গ্রামের বাঘ বিধবা তৈয়বা খাতুন জানান, বাঘে খাওয়া মানুষ চলে যায় জীবিকার যন্ত্রণায় আর বাঘ-বিধবাদের জীবনে নেমে আসে আরও বেশি বেদনা। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরার বেসরকারি সংগঠনের সমীক্ষায় চালানো জরিপে আছে সহস্রাধিক বিধবা নারী। আর এ নারীদের কাছে ঈদ আসে দুঃখ দিতে। উৎসবের দিন মানে তাদের কাছে বিশাল এক কষ্টের বিলাপ।

এ অসহায় নারীদের খবর নেয়ার জন্য কোনো জন প্রতিনিধি, বিত্তবান কারও যেন সময় নেই। ওরা সমাজের কাছে দুঃসংবাদ আর দুর্ঘটনার প্রতীক নারী হিসেবে বিবেচিত। এ ধরনের গঞ্জনা ও অপবাদ দেয়া রীতিমতো অন্যায় ও সামাজিক অবিচার বলে জানালেন সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক কর্মী চৈতালী মুখার্জী।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরুল আলম জানান, সাতক্ষীরার বন বিভাগের হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে এপর্যন্ত বাঘ-বিধবা হয়েছে ৫১৯ জন। এ বিশাল সংখ্যক বাঘ-বিধবাদের জন্য মাঝে মাঝে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারপরও তাদের ভাগ্যের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সরকার একটু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেই বাঘ-বিধবাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

অন্যদিকে বাঘ বিধবা নারীদের আর্তনাদ করা আকুতি বাঘ-বিধবাদের সামনে কেন আসে ঈদ? কেন আসে উৎসব? আর বন বিভাগ বলছে সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিত হলে কেটে যাবে সংকট।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে