রেকর্ড উৎপাদনের পরও নিয়ন্ত্রণহীন লবণের দাম

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৪; সময়: ২:০৩ অপরাহ্ণ |
রেকর্ড উৎপাদনের পরও নিয়ন্ত্রণহীন লবণের দাম

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অনুকূল আবহাওয়ায় রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও সিন্ডিকেট কারসাজির কবলে পড়ে কোনোভাবেই লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এক মাসের ব্যবধানে চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের ৭৪ কেজির বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫০ টাকা। মাঠ পর্যায়ের চাষি এবং লবণের ক্রুড বহনকারী বোট মালিকরা কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ মিল মালিকদের। অন্যদিকে বাড়তি দামের জন্য মিল মালিকদের কারসাজিকেই দুষছেন চাষিরা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে ভিড়ছে একের পর এক লবণের ক্রুড বহনকারী ট্রলার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার সেই ক্রুড পরিশোধনের জন্য চলে যাচ্ছে মিলে। মিলগুলোতেও চলছে পুরোদমে ক্রুড থেকে পরিশোধিত লবণ উৎপাদন।

কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য কয়েকদিনের মধ্যেই প্রয়োজন অন্তত ২ লাখ মেট্রিক টন লবণ। তাই নগরীর মাঝিরঘাটে চলছে লবণ মিলের কর্মব্যস্ততা। তবে চাহিদা বাড়তে থাকায় গত এক মাসের ব্যবধানে ৭৪ কেজি প্রতি বস্তা লবণে ১৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি দামে বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের মেসার্স জামাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ রয়েছে। তবে কোরবানি উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।

আর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবদুল কাদের বলেন, গত বছরের মতো চলতি বছরও বাড়ছে লবণের দাম। মূলত লবণের দাম বাড়লে চামড়ার দামও বাড়ে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা।

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, অনুকূল রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার কারণে গত ৬৩ বছরের লবণ উৎপাদনে রেকর্ড ভেঙে এবার ১০ মাসে উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী-কুতুবদিয়া-চকরিয়া-উখিয়া এবং টেকনাফের অন্তত ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে।

তবে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রুড বহনকারী বোটের বাড়তি ভাড়া পোষাতেই লবণের দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটের মেসার্স জনতা সল্ট ফ্যাক্টরির মালিক শিমুল কান্তি দত্ত বলেন, মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে লবণের দাম।

মূলত হাত বদলের কারণেই রেকর্ড উৎপাদন স্বত্বেও লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মাঠ পর্যায়ে ক্রুড তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে মিলে এসে রিফাইন এবং বাজারে যাওয়া পর্যন্ত অন্তত আটবার লবণের হাতবদল হয়। আর প্রতিবারেই বাড়ে দাম। আরেকটি অংশ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতেই অস্থির হয়ে উঠেছে লবণের বাজার।

তবে এই লাগামহীন দামের জন্য মিল মালিক এবং ক্রুড ব্যবসায়ী একে অপরকে দুষছেন। চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটের মোহনা সল্ট ফ্যাক্টরির মালিক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, মাঠ পর্যায়ে যথেষ্ট পরিমাণে ক্রুড থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ক্রুডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর কক্সবাজারের মহেশখালীর ক্রুড লবণ সরবরাহকারী মো. শওকত জানান, উৎপাদন খরচ বাড়ায় বেড়েছে লবণের দাম। তাই মাঠ পর্যায় থেকে বাড়তি দামে কেনায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বছরে বাংলাদেশে লবণের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন। কক্সবাজারে উৎপাদিত ক্রুড লবণ চট্টগ্রামের পটিয়া ইন্দ্রপোল এবং নগরীর মাঝিরঘাটের ৮০টি কারখানায় পরিশোধন করা হয়।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে