নতুন বই ছাড়াই খালি হাতে ফিরলেন ৪০০ শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২০; সময়: ১:২৪ অপরাহ্ণ |
নতুন বই ছাড়াই খালি হাতে ফিরলেন ৪০০ শিক্ষার্থী

আসাদুজ্জামান মিঠু : বছরের প্রথম দিনটি ছিল দেশজুড়ে বই উৎসব। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই উঠেছে এদিন। কিন্তু তানোর উপজেলার একমাত্র সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

৬ষ্ঠ শ্রেনীর সদ্য ভর্তি হওয়া ৮২ জন্য ও ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ৪০০ বেশি শিক্ষার্থী ও বুধবার সকালে নতুন বই নিতে স্কুলে উপস্থিত হন,সঙ্গে অনেক অভিভাবকগণ আসেন। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের অপেক্ষা থাকেন। বেলা ১১ টার দিকে স্কুল প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেন স্কুলের বার্ষিক সেশন ফি এক হাজার ১০০ টাকা জমা দিলে তবেই মিলবে নতুন বই।

প্রধান শিক্ষকদের এমন ঘোষনা হতভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সরকারে দেয়া বিনামূল্যের বই নিতে কোন টাকা সঙ্গে নিয়ে আসেনি। ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের ঘোষনা অনুযায়ী তাতক্ষণিক এক হাজার ১০০ টাকা করে জমা দিলে ১২ জন কে নতুন বই দেয়া হয়।

সরকারী হওয়াই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তবে বই বিতারণ দিন তিনি স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না।

স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি সেশন ফি দরুণ ১ হাজার ১০০ টাকা করে আদায় করছেন। যে ১২ জন এই টাকা পরিশোধ করেছে, তাদের ভাগ্যেই জুটেছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। আর বাকি ৩৯০ শিক্ষার্থী টাকা দিতে পারেনি, ‘বই উৎসবের’ দিন তাদের হাতে ওঠেনি বিনামূল্যের বই। তাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

বই উৎসবের দিন বুধবার সরেজমিনে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য। অনেক অভিভবক তাদের সন্তানের হাতে নতুন বই না উঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন।

বুধবার ৬ষ্ট শ্রেনীতে নতুন বই নিতে এসেছিলেন তিশা নামের এক শিক্ষার্থী। তিশার সঙ্গে অভিভাবক হিসাবে এসেছিলেন তার ফুপু পারুল। টাকা না আনায় নতুন বই ভাগ্যে জুটেনি তিশার। তারা খালি হাতে বাড়ি ফিরছিলেন। এমন সময় স্কুল গেটে তার ফুপু পারুল ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন,সরকারী স্কুল সরকারী বই । এক হাজার ১০০ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ বই দিলেন না। যেদিন টাকা জমা দেয়া হবে সেদিন বই দিবে বলে ফেরত পাঠান তাদের।

তিনি আরো বলেন,আজ প্রথম দিন তিশা এ স্কুলে এসে টাকা জন্য বই পেলেন না। সারেরা আজ বই দিয়ে পরে সেশন ফি নিতে পারতেন। বই না পেয়ে তিশা মন খারাপ করে বাড়ি ফিরলেন।

বই না পেয়ে শুধু তিশা একাই নয়, ৬ষ্ট থেকে ৯ম শ্রেনীর প্রায় ৩৯০ শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে না পেয়ে মন খারাপ করে সবাই বাড়িতে ফিরতে হয়েছে।

একাধিক স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বুধবার সারা দেশে নতুন বই উৎসব হলেও তানোর উপজেলার এক মাত্র সরকারী স্কুলে বই উৎসব ছিলনা, কারণ বলতে তারা জানান, যেখানে বই নিতে বাড়ি থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দেয়া লাগবে। তবে আমরা প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে পরে টাকা পরিশোধ করতে চাইলেও বই দেয়া হয়নি।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, সারাদেশে নতুন বইয়ের উৎসব থাকলে তানোরের একমাত্র এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন উৎসবের আমেজ ছিল না। নতুন বই বিনামূলে সরকার দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে অথচ তারা টাকা নিচ্ছে,তাতে সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে। সেশন ফি’র নামে বইয়ের জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টি সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক আইনগতভাব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

মুণ্ডুমালা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মি.কামেল মার্ডী জানান, স্কুল পরিচালনান কিছু অর্থ প্রয়োজন হয়। তাই বই দিয়ে নয়, সেশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছে এক হাজার ১০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছে। আজ অনেকে টাকা আনেনি তাই আগামী কাল থেকে শিক্ষার্থীদের সেশন ফি পরিশোধের রশিদ দিলে বই দেয়া হবে। গত বছর থেকে বিষয়টি শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে এভাবে বই বিতারণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান,মুণ্ডুমালা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে বই বিতরণকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি তাতক্ষনিক প্রধান শিক্ষকে টাকা ফেরত দেয়া নিদের্শ দিয়ে বই বিতারণ করতে বলা হয়েছে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু বলেন সেশন ফি এর সাথে বই বিতারণের কোন সর্ম্পক নাই। সেশন ফি পরে দেয়া যাবে। আজ বই উৎসব তাই সবার হাতে বই তুলে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তবুও কি কারণে শিক্ষার্থীদের টাকার জন্য বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে,বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দেখতে বলা হয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে