ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ : ক্যাব
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সদ্যবিদায়ী ২০১৯ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এছাড়া পণ্যমূল্য ও সেবার দাম বেড়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ এবং পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ক্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি গোলাম রহমান। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবার মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবার তথ্য পর্যালোচনা করে ক্যাব এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানান তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পেঁয়াজ, এলাচি, রসুন ও আদা ছাড়া অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বহুলাংশে স্থিতিশীল ছিল। চালের দাম ছিল সহনীয় এবং নিম্নমুখী। তবে বছরের শেষে চাল, আটা, ডিম, শাক-সবজিসহ কিছু পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, সাবান, পান-সুপারি ইত্যাদি পণ্যের দাম কমেছে।
২০১৯ সালে পেঁয়াজ ছিল সর্বাধিক আলোচিত পণ্য। বছরের শুরুতে এর দাম ছিল প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা। নভেম্বর মাসে তা বেড়ে খুচরা বাজারে ২৫০ টাকারও বেশি বিক্রি হয়েছে। উৎপাদন মৌসুম শুরুর পরও ডিসেম্বর শেষে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকার কাছাকাছি। এ বছর দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। এলাচির দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আদার দাম বেড়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বিভিন্ন শাক-সবজির গড় দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেড়েছে পটলের দাম, ৫২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ শতাংশ
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। বস্তির ঘরভাড়া ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও মেসের ভাড়া বেড়েছে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। বাসাবাড়িতে বার্নার গ্যাসের চুলার ব্যয় বেড়েছে ২১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তেলের দাম কমলেও পরিবহন ব্যয় কমেনি
হাইওয়ে সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি তেলের মূল্য কমলেও যাত্রী ও পরিবহন ব্যয় কমেনি। ২০১৯ সালে রাজধানীতে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সড়ক রেল ও নৌ পথে ৪ হাজার ৮৯৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আগের বছরের তুলনায় সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ৫১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ছাত্রদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সড়ক নিরাপত্তা আইন পাস হয়। গত বছর এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে আইন বাস্তবায়নে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার ফি অনিয়ন্ত্রিত, ওষুধের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরাও ঘটা করে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই বিদেশ যান। এতে স্পষ্ট যে, দেশের চিকিৎসা সেবার মান কাঙ্খিত মানে পৌঁছায়নি। ওষুধ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪২টি দেশে ওষুধ রফতানি করে। কিন্তু দেশে ব্যাপকভাবে নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। কিছু ওষুধের উচ্চমূল্য দরিদ্র রোগীদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বেসরকারি খাতে ডাক্তারদের ফি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার ফি বহুলাংশে অনিয়ন্ত্রিত, কোনো ক্ষেত্রে অসন্তোষজনক।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সার্টিফিকেট প্রদানের কারখানা
শিক্ষা খাতে ঝরেপড়ার হার কমলেও অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ যা দিন দিন বাড়ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সার্টিফিকেট প্রদানের কারখানায় পরিণত হয়েছে। দেশে এখনও দুই কোটি মানুষ অতি দরিদ্র। এছাড়া বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র, নিম্নআয় ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের শ্রেণিভুক্ত। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি
সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের দিক তুলে ধরতে ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানায় ক্যাব। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাম রহমান বলেন, কারা কারণে অকারণে মূল্যবৃদ্ধি করছে, তাদের খুঁজে দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দেশে চালের দাম বাড়ছে আর কৃষক ধানের দাম পায় না। এই দ্রব্যমূল্যের ব্যয় সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম প্রমুখ।