২৫শে পা রাখলো সৈয়দপুর-মচমইল মহিলা ডিগ্রী কলেজ
শামীম রেজা, বাগমারা : স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছে সৈয়দপুর-মচমইল মহিলা ডিগ্রী কলেজ। তিল থেকে তালে রুপান্তরিত হয়েছে কলেজটি। ঘর থেকে মেয়েদের বের করাই যেখানে ছিল দূরহ ব্যাপার সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের লেখাপড়ায় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করাও ছিল কঠিন। সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের মাথা উচু করে দাঁড়াতেই ১৯৯৫ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মচমইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মরহুম এস.এম. আসাদুল্লাহ্ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই কলেজটি। আগামী ২৫ জানুয়ারী শনিবার কলেজ প্রতিষ্ঠার হতে চলেছে ২৫ বছর। ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে কলেজ চত্বরে আয়োজন করা হচ্ছে এক উৎসবের। এরই মধ্যে কলেজটি সেজেছে অপরুপ সাজে। ২৫ বছর পূর্তিতে আগমন ঘটবে নবীণ-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের। ২৫ বছর পূর্তিতে কলেজের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঝলমল করছে কলেজ ক্যাম্পাস।
সৈয়দপুর-মচমইল মহিলা ডিগ্রী কলেজ বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে উত্তর পূর্ব কোনে জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা বাগমারার পশ্চিম প্রান্তে সৈয়দপুর এবং মচমইল গ্রামের প্রান্তসীমা দিয়ে বয়ে যাওয়া খালপাড়ে মনোরম পরিবেশে স্থাপিত করা হয়েছ। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম এস.এম.আসাদুল্লাহ্র চিন্তাধারায় একমত হয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন সময়ে এগিয় আসেন মচমইল গ্রামের আহাদ আলী সরদার, সৈয়দপুর গ্রামের নছির উদ্দীন মিলমালত, ইসাহাক আলী মিলমালত, মির্জাপুর গ্রামের আব্দুর রহিম শাহ্, বিলবাড়ি গ্রামের আব্দুস সালাম প্রামানিক, শংরকপৈ গ্রামের সাইদুর রহমান সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রতিষ্ঠা কালে মানবিক বিভাগে ১৭ জন ছাত্রী নিয়ে পথচলা শুরু করে কলেজটি। এরপর ২০০১-২০০২ শিক্ষা বর্ষ হতে বিজ্ঞান এবং ব্যবসা শাখা চালু হয়। প্রায় দুই একর জায়গার উপরে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ এমপিও ভুক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষকে। ২০০০ সালে সরকার প্রদত্ত ৪১২টি বই এবং কলেজের নিজস্ব তহবিল ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রায় ১২০০ বই নিয়ে কলেজে ছোট আকারে চালু হয় পরিপাটি একটি গ্রন্থাগার। ওই বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান যন্ত্রপাতি এবং নিজস্ব যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান গবেষণাগার। সীমিত পরিসরে হলেও ছাত্রীদের চাহিদা পূরণে ল্যাবগুলো খুবভালো ভূমিকা পালন করছে।
২০০৩ সালে কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি চালুর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয় এই কলেজ। একই সালে বোর্ড প্রদত্ত দুইটি কলেজের নিজস্ব একটি কম্পিউটার দিয়ে স্থাপিত হয় মিনি কম্পিউটার ল্যাব। ২০১১ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয় কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে দেয়। সেখানের ৮টি ডেক্সটপ একটি ল্যাপটপ একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত কম্পিউটার ল্যাব। যা শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পরে আরো একটি ল্যাপটপ এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এর সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে এ অঞ্চলে প্রথম মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস উপস্থাপন শুরু হয় এ কলেজ থেকেই। ২০১২-১৩ শিক্ষা বর্ষ হতে কলেজে বিএ কোর্স চালুর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভূক্তি লাভ করে। প্রথম বছরে ৩৪ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ডিগ্রী কোর্সের। পরের বছর চালু হয় বিএসএস কোর্স। বর্তমানে এই কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের ১৫০০ নির্বাচিত বেসকারী কলেজ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপির প্রচেষ্টায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। অত্যাধুনিক এই একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ৮টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সহ চার হাজার বই সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার এবং আধুনিক বিজ্ঞানাগার নিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশষ দিনগুলোতে মেয়েদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে ২০১৯ সালে স্থাপন করা হয়েছে উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। একজন সিনিয়র শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অবসর বিনোদনের জন্য কলেজের ক্রীড়া বিভাগের তত্ত্বাবধানে ছাত্রী কমনরুমে টেবিল টেনিস সহ বিভিন্নখেলাধুলার সামগ্রী রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ব্যাডমিন্টন এবং ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম। অপরদিকে ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারীদের নামজ আদায়ের জন্য কলেজ চত্বরে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় একটি পরিপারি সৌন্দর্য মন্ডিত মসজিদ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কলেজ চত্বরে শহীদ মিনারের নির্মাণ শুরু হয়েছে যা বর্তমানে নির্মানাধীন।
আগামীতে ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণসহ একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ এস.এম.আহ্সানুল করিম মামুন। তিনি আরো বলেন, কলেজে বিষয় ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা প্রতিটি ক্লাস নেয়া হয়ে থাকে। নির্মল পরিবেশে লেখাপাড়া শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছেন।