জাফরের ভাগ্য এগিয়ে যাচ্ছে ফুলের সুবাসে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২০; সময়: ৬:২৫ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
জাফরের ভাগ্য এগিয়ে যাচ্ছে ফুলের সুবাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক : “জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’-দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো হে অনরাগী!”-উক্তিটি ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের। এটি একটি জীবনমুখী কবিতার অংশ বিশেষ। আজ থেকে কয়েক দশক আগে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন খাদ্যে শরীরের ক্ষুধা মিটাই আর ফুলে মনের ক্ষুধা নিবারণ করে।

ফুল ভালবাসেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ফুল চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানো সম্ভব-এব্যাপারে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন। তবে ফুল চাষ করে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। এমন একজন সফল ফুলচাষি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিষার ডাইং প্রসাদপাড়ার ইসাহাক আলীর ছেলে জাফর ইকবাল।

ধানের চাষ করে সেচের খরচই ওঠে না। এ সময় শুরু হয় শস্য বহুমুখীকরণের চিন্তা। গত কয়েক বছর থেকে জেলার লাল মাটি খ্যাত বরেন্দ্র গোদাগাড়ীতে চলছে ফুলের চাষ। এখন পর্যন্ত ফুলের চাষ করে পিছনে ফিরেনি কেহই। পাশেই পবা উপজেলার হরিষার ডাইং প্রসাদপাড়া। অনেক আবাদ করেও লোকসানে পড়তে হয়েছে যুবক জাফর ইকবালকে। শেষ পর্যন্ত তিন বছর আগে মাত্র ১০ কাঠা জমিতে ফুলচাষ শুরু করেন তিনি। আর পিছনে তাকাতে হয়নি জাফর ইকবালকে। এব্যাপারে জাফর ইকবালকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেন উপজেলার কাদিপুর ব্লকের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল হক। ফুলচাষেই ভাগ্য ফিরেছে তার।

বর্তমানে ফুল বিক্রির লাভ দিয়েই অপরের জমি লীজ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। জমিতে রয়েছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, চাঁপা গাঁদা, হাজারি গাঁদা, বাসন্তী গাঁদা। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, তিন বিঘা জমিতে গাঁদা ও এক বিঘা জমিতে গোলাপ রয়েছে। স্বল্প পরিসরে রয়েছে স্টার, ডালিয়া, কসমস, চন্দ্র মল্লিকা, বাগান বিলাস। ফুল তোলা ও বিক্রিতে সহযোগিতা করে থাকেন জাফর ইকবালের স্ত্রী নুশরাত জাহান। ফুল থেকে সম্পূর্ণ খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছরই লাভ হয় প্রতি বিঘাতে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।

রোববার দুপুরে জাফর ইকবালের ক্ষেতে সরেজমিন দেখা যায়, জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী নুশরাত জাহান ফুল সংগ্রহ করছেন। জাফর ইকবাল জানান, বর্তমানে ফুল চাষের চেয়ে লাভজনক ফসল আর নেই। যত দিন যাচ্ছে ফুলের চাহিদা ততই বাড়ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে পুরো বছরই অনুষ্ঠান চলবে এবং ব্যাপক ফুল বিক্রি হবে। এছাড়াও প্রতিটি অনুষ্ঠানেই মাধুর্যতা বাড়াতে আনুসাঙ্গিক হিসেবে আয়োজকরা ফুল রাখছেন। বছরের পুরো সময়ই ফুল বিক্রি হয়। তবে বিশেষ দিনগুলো যেমন প্রতিটি জাতীয় দিবস, ঈদ-পূজা ও ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবসে প্রতিটি ফুলের দাম দ্বিগুন-তিনগুণও বেড়ে যায়।

জাফর ইকবাল বলেন, প্রায় ১ বিঘা জমি থেকে প্রতিদিনই ১০-১৪ হাজার গাঁদা ফুল আহরণ করতে হয়। বাজারে পাইকারি প্রতি হাজার গাঁদা ফুলের দাম তিনশো’ টাকা। প্রতিদিন শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে থাকছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আবার জাতীয় দিনগুলোতে প্রতি হাজার বিক্রি হয় পাঁচশো’ টাকায়। তখন আরো বেশী থাকে। পাইকারি বাজারে প্রতিটি গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫-৭ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক প্রতিটি ৪-৭ টাকা। বছরে প্রতি বিঘা গোলাপ ফুলে এক লাখ টাকা লাভ হয়। আর্থিক লাভবানতো বটেই ফুল চাষ করে আমার সম্মানও বেড়ে গেছে। ফুল যেহেতু মনের খোরাক ও অনুষ্ঠানের মর্যাদা বাড়াই সেহেতু ফুল চাষিরাও সম্মানিত হয়। প্রতিদিনই বড়বড় কর্মকর্তা, শিক্ষকরা আমার সাথে কথা বলছেন, ফুল ক্রয়ের বাইনা দিচ্ছেন, ফুল কিনছেন। আবার তার মত অনেকে ফুল চাষে নেমেছেন।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে প্রথম গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয়। ফুলের চাষ প্রতি বছরই বাড়ছে। তেমনি চাহিদাও বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় চাহিদারর তুলনায় ২৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। বাকি ৭৫ শতাংশ ফুল যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করতে হয়।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, রাজশাহীতে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা আছে যেহেতু সেহেতু চাষিরা লাভবান হবেন। এই উপজেলাতে দুই একটি মাঠে নতুন করে ফুল চাষে ঝুকেছেন চাষিরা। আগামী আরো বেশী চাষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুম হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ায় ধান ও গমচাষ করতে গিয়ে তেমন লাভবান হচ্ছে না কৃষকরা। তাই বিকল্প ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ ক্ষেত্রে ফুল চাষে লাভবান হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে