সবজি ক্ষেতে পোকা দমনে ইয়োলো ট্র্যাপ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলায় এখন পোকা দমনে ইয়োলো ট্র্যাপ (হলুদ ফাঁদ) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কীটনাশক প্রয়োগ না করে বিষমুক্ত সবজি আবাদের জন্য কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বেগুনে পোকার আক্রমন বেশী হয়ে থাকে। এতে একদিকে বেগুন চাষে খরচ বেশী হয়ে থাকে এবং অন্যদিকে পোকাযুক্ত বেগুন খুবই কম দামে ও ফলন হয়ে থাকে। তবে এবারে ক্ষেতে হলুদ ফাঁদ ফেদে পোকা ও বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করছেন বলে দাবি করেছেন চাষিরা। রাজশাহী জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ হয়ে থাকে।
বেগুন আমাদের দেশে অতি জনপ্রিয় এবং নিত্যআবশ্যকীয় সবজি, যা সারাবছর উৎপাদিত হয়। বেগুনের শতাধিক জাত আছে। যা পুরো বাংলাদেশে এলাকা ভেদে আবাদ হয়। বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকারক বালাইয়ের মধ্যে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা অন্যতম। ক্ষতিকর পোকা ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে শুধু রাসায়নিক ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই বালাইনাশকের উপর্যুপরি ব্যবহারের ফলে অনেক অপ্রধান ক্ষতিকর পোকা প্রধান ক্ষতিকর পোকায় পরিণত হচ্ছে এবং প্রধান ক্ষতিকর পোকার দেহে কীটনাশকের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বাড়ছে, মাটির উর্বরতা ও ফলন কমছে।
জৈবিক দমনের মাধ্যমে শুধু নির্বাচিত ক্ষতিকর পোকা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয় এবং কোনো পোকার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাও উৎপন্ন করে না। জৈবিক বালাইব্যবস্থাপনা পদ্ধতি একটি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ পদ্ধতি। ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ফসলের কার্যকর জৈবিক দমনব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছেন এবং কাজে লাগিয়ে সফলতাও পেয়েছেন। ফসলের মারাত্মক সমস্যার মধ্যে বেগুনের ডগা ও ফলছিদ্রকারী পোকা একটি। এটি দমনে জৈবিক বালাইব্যবস্থাপনার ইয়েলো ট্র্যাপ ভাল কাজে দিচ্ছে।
ফসলের পোকা দমনে ইয়েলো ট্র্যাপ বা হলুদ ফাঁদ কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। পোকা দমনে আঁঠাযুক্ত এক ধরনের হলুদ কাগজ এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত সবজি জাতীয় ফসলে এ ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ফাঁদ ব্যবহারের ফলে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে নিশ্চিত হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি প্রাপ্তি। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে যুক্ত হয়েছে হলুদ ফাঁদ।
মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাট গ্রামের শিক্ষক কাম কৃষক আবুল কাশেম জানান, কীটনাশক ব্যবহারে খরচ অনেক বেশি। আর এখন হলুদ ফাঁদ ব্যবহারের খরচ নেই বললেই চলে। তাছাড়া বিষমুক্ত সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এ সবজি ভালো দামে বিক্রি করা যায়। তিনি মাত্র পাঁচ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করেন। প্রায় তিন মাস থেকে ৬ দিন পরপর ৬০ কেজি করে ফলন হয়। প্রথম দিকে এই বিষমুক্ত বেগুন পাইকারি বিক্রি হয় ১২শ’ টাকা মণ। বর্তমানে যা ৮শ’ টাকা মণ (প্রতি ৪০ কেজি)।
পবার নওহাটা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মজিবর রহমান জানিয়েছেন, হলুদ ফাঁদ ব্যবহারের ফলে নিরাপদ সবজি উৎপন্ন হচ্ছে এবং কৃষক লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এক্ষেত্রে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ একেএম মুনজুরে মাওলা জানান পোকা-মাকড় সাধারণত হলুদ রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে সহজেই আঁঠাযুক্ত হলুদ কাগজে এসে আটকে গিয়ে মারা পড়ে। আলু, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির জমিতে হলুদ ফাঁদ ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি পানের বরজেও এই ফাঁদ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে কৃষক। এতে খরচও অনেক কম পড়ছে। ফলে দিন দিনই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে হলুদ ফাঁদ।