করোনার গুজব ছড়ানোয় : ২৭ জন আটক, ২৫ ফেসবুক আইডি বন্ধ
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মুসলমানদের জন্য করোনাভাইরাস কোনো আতঙ্কের কারণ নয়, বরং কাফিরদের প্রতি চরম আযাব-গজব, করোনাভাইরাস হলো দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষীদের জন্য এক কঠিন গজব, করোনা, ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই, ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা হারাম, কাট্টা কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী বিভ্রান্তি ছড়ানো অব্যাহত রেখেছে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারকারী চক্র। এই অভিযোগে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সেই সঙ্গে ২৫টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধ করেছে করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও সাইবার ইউনিট। এছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত আরো শতাধিক ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। গত রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বেসরকারি চাইনিজ সংগঠনের দেওয়া করোনা প্রতিরোধে পিপিই সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
তবে এরপরও করোনাভাইরাস নিয়ে ফেসবুক, ইন্টারনেট ও লিফলেট বিতরণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গুজব ছড়াচ্ছে। গত শনিবার এক অভিযানের ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোন করোনা নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- আওকাত হোসাইন (৫৩), ফেরদাউস হাসান টিটু (২৫), তাওহিদুল ইসলাম (২৫), মুসলিম উদ্দিন (২৩), মফিজুল ইসলাম (২০) ও ফরিদ হোসেন (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লিফলেট ও তাদের বহনকারী একটি পিক-আপ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ম, ৫১-২৫৯০) জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এসএম শামীম বলেন, করোনাভাইরাস নিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে লিফলেট বিতরণের সময় হাতেনাতে আওকাত হোসাইন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে বাকী পাঁচজনকেও রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন বিদ্বেষমূলক কাজের জন্য এবং জন উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও রমনা থানায় দুটো মামলা রুজু করা হয়েছে।
লিফলেট বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জব্দ লিফলেটে করোনাভাইরাস নিয়ে যেসব বানী লিপিবদ্ধ আছে যা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ও ছোঁয়াচে রোগ বিস্তারের পক্ষে সহায়ক।
এদিকে, ফেসবুক ইন্টারনেটে করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির সাইবার ইউনিট বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসকে (কোভিড-১৯) কেন্দ্র করেও অনেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যারাই এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
সাইবার ইউনিটের অপর একটি সূত্র জানায়, ইন্টারনেটে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছডাচ্ছে ব্যাপক হারে, আর তাই বিশেষজ্ঞরা ‘তথ্য স্বাস্থ্যবিধি’ সবাইকে মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন সবাইকে। সেক্ষেত্রে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে সকলকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস নিয়ে পৃথিবীব্যাপী যখন তোলপাড় সৃষ্টি হতে শুরু করে তখন থেকেই আমরা সতর্ক হয়ে এই নিয়ে কাজ শুরু করি।
এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্ত আইডিযুক্ত আইডিগুলো শনাক্ত করে বন্ধ করা হয়েছে। তবে অনেকেই না বুঝে এগুলো শেয়ার করে গুজবটাকে বিস্তৃত করছেন। যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। তবে আমরা কোনো পোস্ট নিশ্চিত না হয়ে সবাইকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ডিএমপির আটটি ক্রাইম জোনের থানা পুলিশের পাশপাশি সারা দেশে জেলার সকল থানা পুলিশ এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সবগুলো সংস্থা গুজব বন্ধে কাজ করছে। গুজব বন্ধে তারা সাইবার পেট্রোলিং করছে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ পর্যন্ত ২৫টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধসহ সারাদেশে এ পর্যন্ত ২৭ জনকে আটক করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে ৪টি ইস্যুতে গুজব সৃষ্টি করা আরো শতাধিক ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্রের মুসলিমবিরোধী কার্যক্রমসহ বাংলাদেশের সরকার ও সরকারের নানা কাজের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এছাড়া গুজবের পোস্ট শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ৭ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, না বুঝে এগুলো শেয়ার করেন তারা। তাই এই ৭ জনকে পরবর্তীতে এসব না করার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, এ ধরনের অস্বাভাবিক বা গুজবের পোস্ট পাওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে এগুলোর সত্যতা খোঁজে। সত্যতা না পেলে পোস্টদাতাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুক-ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে সেসব আইডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে এগুলো বন্ধের অনুরোধ জানান।