করোনাকালে রাবিসহ সারাদেশে ১৭১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : আইএমফাইন, জাস্ট টায়ার্ড’ সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোবাসসিরা তাহসিন ইরা সম্পর্কের টানপোড়নের জেরে হতাশাগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করে।
মানসিক চাপে গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ রাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দেবজ্যোতি বসাক পার্থ নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। গত ৪ জুন ২০২১ রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তানমিরা খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে।
প্রেম ঘটিত কারনে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম সিয়াম (২২) আত্মহত্যা করে। গত ৩ জুন ২০২১ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাবিহা সুহা মায়ের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করে।
‘এই দুনিয়া আমার জন্য নয়, পারলে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন’ এই সুইসাইড নোট লিখে গত ৬ মার্চ ২০২১ আত্মহত্যা করে নাইমুল হাসান মিশন (২১) নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরর এক শিক্ষার্থী। হতাশাগ্রস্থ হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা আফরিন সুমি (১৯) আত্মহত্যা করে ২৭ অক্টোবর ২০২০ ফারিয়া তাবাসসুম রূম্পা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে৷
শুধু ইরা, পার্থ, তানমিরা, সিয়াম, সুহা, নাইমুল, সুমি, রূম্পা নয়; মহামারী করোনাভাইরাস প্রকোপ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৮ মার্চ ২০২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রায় ১৬ মাসে অন্তত ১৭১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ১৩ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
গত বছরের ১৮ মার্চ সারাদেশে একযোগে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে গত ৪ জুন পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত আত্মহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে আগামী দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও আর ফেরা হবে না তাদের।
মনোচিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের শাসন, কোনো কিছু বায়না ধরে না পাওয়া, প্রেমঘটিত টানাপড়েন, আর্থিক সংকট, বিষণ্নতা ও একাকিত্বসহ ছোট ছোট সমস্যায়ও অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ফলে তারা তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করছে না। এ জন্য পরিবারের দায়িত্বশীল ভূমিকা, সচেতনতা ও সহনশীলতা বাড়াতে হবে। বিষণ্নতাগ্রস্ত ব্যক্তিকে একা না রাখা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলরসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং কোনো একটি অভাব পূরণ না হওয়া মানে জীবন শেষ নয়, এই উপলব্ধিসহ অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে আত্মহত্যাপ্রবণতা রোধ করা সম্ভব।
করোনার সময়ে যেভাবে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে গেছে তা সত্যিই শঙ্কিত করে! এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পরিবারে জ্যেষ্ঠদের খেয়াল রাখতে হবে, তাঁদের ছেলে-মেয়ে কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে। না হলে যে কেউ ভুল পথে পা বাড়াতে পারে। কারণ আত্মহত্যা করার পেছনে পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, তা নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা হওয়া দরকার।