আজ আমার স্বজন হারানোর দিন
পলাশ আহসান : আগেরদিন রাতে ধুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন সিএমএইচ থেকে ফিরছিলাম তখনও বুঝিনি বা বুঝতে চাইনি সকালেই চূড়ান্ত খারাপ খবরটি শুনতে হবে। সকালে সাড়ে সাতটার দিকে রহমান মুস্তাফিজ ভাই খবরটি দিলেন “আলমগীর ভাই লাইফ সাপোর্টে” আমি তখন আমাদের নিউজরুমে। যখন টিকার দিতে বলছি তখনও বিশ্বাস করিনি, আর কিছুক্ষণের মধ্যে টিকার বদলে সর্বশেষ দিতে হবে ” শাহ আলমগীর আর নেই “।
কীভাবে বিশ্বাস করি, সম্ভবত মৃত্যুর দিন দশেক আগে পিআইবিতেই শেষ দেখা হয়েছিল। বললেন সিঙ্গাপুরে একটা টেস্ট দিয়ে এসেছেন। খানিকটা ফানের মত করেই বলেছিলেন ” আধুনিক সময়ে আধুনিক চিকিৎসা করাচ্ছি, এর পরেও যদি ঠিক না হয়, গিয়ে শুয়ে পড়বো” হ্যাঁ বিছানার শোয়া অবস্থায় সিএমএইচ এর আউটডোর মনিটরিং টেলিভিশন স্ক্রিনে সবশেষ সজীব আলমগীর ভাইকে দেখেছিলাম।
আলমগীর ভাইয়ের মৃত্যুটা আমার কাছে কেমন যেন ভোজবাজির মত । নানা কাজের পরিকল্পনা করতে করতে লোকটা চলে গেলো। অনেকটা এরকম লাগে আমার কাছে ” তোমরা একটু বস চা খাও আমি জাস্ট মিটিংটা সেরে আসি” কারণ এত কাজের কথা তাঁর সঙ্গে হতো, এত আইডিয়া শেয়ার করতেন, যার অর্ধেকও শেষ হয়নি। সেই না শেষ হওয়া ধারণাগুলো ঘুরতে থাকে মাথার মধ্যে। মনে হয় কাজগুলো শিগগির শেষ করবো আমরা।
সাংবাদিকতা নিয়ে তার ধারণাগুলোর বেশিরভাগই ছিল সাংবাদিকের ভালো থাকা নিয়ে। কাজের মান নিয়ে ভাবতেন কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভাবতেন কেন একজন মানুষ কাজের মান ভালো করতে পারছেন না সেটা নিয়ে। সব সময় বলতেন, একজন সাংবাদিকের ভালো থাকার ওপর তার কাজের মান অনেকটা নির্ভর করে। আমিও এখন তাই বিশ্বাস করি।
আমার সঙ্গে তাঁর ১৮ বছরের পরিচয় এর মধ্যে বহু সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমার যত ভালো মন্দ এর সব কিছুর সঙ্গে তিনি ছিলেন। একই রকমভাবে ছিলেন আরও অনেকের সঙ্গে। সেই তালিকায় ঢাকার বাইরের অনেকে ছিলেন। হয়তো কোন জেলার ওপর দিয়ে যাচ্ছেন, কাকে যেন ফোন করলেন। গাড়ি থামিয়ে হয়তো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে এককাপ চা খেলেন তার সঙ্গে। এরা প্রত্যেকেই তার সাবেক সহকর্মী।
মোদ্দা কথা তিনি মানুষকে সম্মান করতেন। এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ। আমিই তার রুমে বসে অনেককে নানা বিষয়ে জাহির করতে দেখেছি। আমি বিরক্ত হচ্ছি বুঝতে পেরে, হাতের ইশারায় আমাকে কথা বলতে নিষেধ করতেন। পরে বলতেন কেউ বলতে চাইলে শোন। অনেক কিছু পাবে। এরকম ভাবে আচরণগত অগণিত ভুল তিনি শুধরে দিয়েছেন। আরও অনেক শোধরাবার ছিল আলমগীর ভাই। আপনি চলে গেলেন। ভাল থাকুন…
লেখক- পলাশ আহসান, গণমাধ্যম কর্মী, একাত্তর টেলিভিশন