অসময়েও দেখা মিলছে কাঁঠাল

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৪; সময়: ৬:০৯ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
অসময়েও দেখা মিলছে কাঁঠাল

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাঘা : মধুমাস’ নামে খ্যাত জ্যৈষ্ঠ আসতে এখনও কয়েকটা মাস বাঁকি। তবে এখনো গত বছরের দেশীয় জাতের মৌসুমী ফল কাঁঠালের দেখা মিলেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ধনদহ গ্রামে। এই কাঁঠাল দেখতে ও স্বাদ গ্রহণ করতে সেখানে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। তারা এই কাঁঠালের গুণাগুণ ও চারা সংগ্রহের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

শনিবার (০২-০৩-২০২৪) ৬৬ বয়োসার্ধ গাছ মালিক লিয়াকত আলী জানান, এটা বারোমাসি কাঁঠালের জাত নয়। এই কাঁঠাল সুস্বাদু। তার বয়স যখন ১৬/১৭ বছর তখন ৪/৫ টি চারা লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২টি চারা ছাড়া সবগুলো মারা যায়। গতানুতিকভাবে গাছটি বড় হয়ে ফল দিতে শুরু করে। গত মৌসুমে ওই গাছে প্রায় অর্ধ শতাধিক কাঁঠাল ধরেছিল। মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও গাছে এখনও একটি কাঠাল আছে। এবার মৌসুমে ওই গাছে মুচি আসতে শুরু করেছে।
লিয়াকত আলী জানান, তার নানা সুলতান আলী সেখ বাজার থেকে কিনে আনা কাঁঠাল থেকে বীজ সংগ্রহের পর রোপন করেছিলেন। নানার লাগানো সেই গাছটি কেটে ফেলার আগে ৪/৫ টি বীজ রোপণ করেছিলেন। ২/১ টি বাঁচে। মৌসুম শেষ হওয়ার পরেও সেই গাছের কাঁঠাল থাকছে।

দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আকারভেদে একেকটি কাঁঠাল সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে বিক্রি না করে নিজে ও আত্নীয়স্বজন মিলে কাঁচা-পাঁকা খান। গাছে যেটি রয়েছে তার ওজন ১০ কেজির বেশি হবে।
পাশের অমরপুর গ্রামের টিপু মন্ডল বলেন, আমি এই কাঁঠাল খেয়েছি। খাওয়ার সময় হাতে কোনো আঁঠা লাগেনি। মিষ্টি কিছুটা কম হলেও খেতে বেশ মজা। বিচি এনে দুটি চারা বাড়িতে রোপণ করেছিলাম। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে চারা দুটি মারা গেছে। আবারও চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে রোপণের ইচ্ছা আছে।

অন্যদিকে,মৌসুম শুরুর আগেই আগাম কাঁঠাল ধরেছে গৌরঙ্গপুর গ্রামের ইউনুস আলীর কাঁঠাল গাছে। ১৯৬৪ সালে বিনিময় করে এই গ্রামের আসার কয়েক বছর পর থেকে কাঁঠাল গাছটিতে আগাম কাাঁঠাল ধরতে দেখছেন বলে জানান। এই কাঁঠাল খেতেও সুস্বাদু। খাওয়ার সময় কচকচ শব্দ করলেও হাতে বা মুখে কোনো আঠা লাগে না।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন,তার উপজেলায় আগাম ফল ধরার গাছ থাকলেও জৈষ্ঠ্যর কাঁঠাল এই অসময়ে গাছে থাকার বিষয়টি নজরে ছিলনা। খোঁজ খবর নিয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিএআরআই গাজীপুরের ফল বিভাগের উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো.জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কাঁঠালের অসংখ্য জার্মপ্লাজম রয়েছে। কিন্তু এগুলো নিদিষ্ট কোন নাম নেই। এদেশে চাষকৃত জাতগুলোকে শ্বাসের বুনটে বা ধরনের উপর ভিত্তি করে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা খাজা বা শ্যাওলা (শাঁস শক্ত ও কচকচে।) গালা বা রসা(শাঁস অত্যন্ত নরম ও রসালো)। এবং দো-রসা বা আধারসা(শাঁস মাঝারি শক্ত ও রসালো)।

অসময়ে ‘কাঁঠাল’ প্রসঙ্গে বলেন,কাঁঠালের হারভেস্টোর টাইম (আহরণের সময়) আসেনি। পুরাতন গাছ হলে আগাম ফল আসতে পারে। বারোমাসি কিছু কাঁঠালও সারাবছর পাওয়া যায়। তবে দেশীয় জাতের কাঠাল গাছের বয়স বেশি হলে, এক মৌসুমের কাঁঠাল আরেক মৌসুম আসা পর্যন্ত থাকতে পারে। এর সংখ্যা খুবই কম।

তিনি জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বাসায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বারি কাঁঠাল-১,বারি কাঁঠাল-২, বারি কাঁঠাল- ৩, বারি কাঁঠাল-৪, বারি কাঁঠাল-৫ ও বারি কাঁঠাল ৬ নামে কাঁঠালের ছয়টি উন্নত জাত কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য মুক্তায়িত করেছে। বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষযোগ্য ও নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল।

বারি কাঁঠাল-১: (মে-জুন বা জ্যৈষ্ঠ) আগাম জাত। গাছ খাড়া প্রকৃতির ও মধ্যম ঝোপালো। গাছ প্রতি ১২৫টি ফল ধরে যার ওজন ১১৮১ কেজি।

বারি কাঁঠাল-২: অমৌসুমী জাত। গাছ খাড়া প্রকৃতির ও মধ্যম ঝোপালো। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছ প্রতি গড়ে ৭৯টি ফল ধরে যার ওজন ৫৫০ কেজি।

বারি কাঁঠাল-৩: বারোমাসি জাত (সেপ্টেম্বর- জুন)। গাছ খাড়া প্রকৃতির ও মধ্যম ঝোপালো। সেপ্টেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছ প্রতি ২১৯-২৪৫টি ফল ধরে যার যার ওজন ১১৮৯- ১৩৩২ কেজি।

বারি কাঁঠাল-৪: মৌসুমী জাত। ফলের উপরের পৃষ্ঠ দেখতে সবুজাভ বাদামী বর্ণের। ফলের গড় ওজন ৫.৬৮ কেজি।
বারি কাঁঠাল-৫: অমৌসুমী জাত। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। গাছ বিস্তৃত ডাল- পালা বিশিষ্ট, সতেজ ও সবুজ। উচ্চ ফলনশীল। গাছের বয়স অনুপাতে প্রচুর ফলদানকারী। ফলের গড় ওজন ৪.০ কেজি।

বারি কাঁঠাল-৬: বারোমাসি জাত। বিস্তৃত ডাল-পালা বিশিষ্ট, সতেজ ও সবুজ। উচ্চ ফলনশীল। গাছের বয়স অনুপাতে প্রচুর ফলদানকারী। ছোট গাছে অর্থাৎ দেড় থেকে দুই বছরের গাছে ফল ধরে। ফলের গড় ওজন ৩.৯৩ কেজি, এ জাতটি রপ্তানি উপযোগী। কোনো উদ্যোক্তা যদি এই কাঁঠাল চাষে এগিয়ে আসেন, তাহলে সহযোগিতা করব।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে