ইবি থানার স্থানান্তর নয় বরং থানার পাশাপাশি উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার স্থানান্তর নয় বরং থানার পাশাপাশি উপজেলা গঠনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নগরায়ন ও শিক্ষার মান উন্নতকরণ চায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন লক্ষ্যে গঠিত কমিটির একটি প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ রশিদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে তাঁর অফিস কক্ষে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। অতঃপর প্রতিনিধি দলটি বিকাল ৩:০০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. নকীব মোঃ নসরুল্লাহ র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে থানা স্থাপন প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বর্তমান কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর মোঃ তৌহিদুল হাসান লাবু, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডক্টর শহিদুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান মিলটন, আনিচুর রহমান, আলমগীর হোসেন, এস আর শিপন, অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের মতামত না নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই থানাকে সরিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে দুর্গম ঝাউদিয়ায় নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। গত ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিকার কমিটির সভায় ঝাউদিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা স্থানান্তর এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর সম্মতিতে থানা স্থানান্তর করে এখানে পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সে সময় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পাশাপাশি উপজেলা গঠন হলে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নগরায়ন হবে এবং শিক্ষার্থীদের অসংখ্য সমস্যার সমাধান হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে একসময় ফসল আবাদ হতো আর এখন হয় জ্ঞানের আবাদ। এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা ছাড় দিতে পারিনা।”
আলোচনা সভায় পূর্ববর্তী সরকারের এক তরফা সিদ্ধান্ত বাতিল করে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অত্র অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কুষ্টিয়া-খুলনা প্রধান সড়ক সংলগ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে পছন্দমতো জায়গায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা’ স্থাপন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদানে অনুরোধও করেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য বলেন, আমরা অবশ্যই চাই থানা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই থাকুক। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসছে, এবং তারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের। তাছাড়া আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি মেয়েদের হল এবং পাঁচটি ছেলেদের হল রয়েছে তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অবশ্যই ইবি থানা স্থানান্তরের প্রশ্নই ওঠেনা।
সবশেষে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়নের কমিটির সদস্যাদের আশ্বাস প্রদান করেন যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে থানা স্থানান্তর রোধে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মাঝামাঝি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ঠিকানা জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে স্থাপন করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অগোচরেই ২০২২ সালে এই থানা ঝাউদিয়ায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইবি ক্যাম্পাসসহ প্বার্শবর্তী সাতটি ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় কাজ করে আসা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা স্থানান্তর প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী।