বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ৫ বছরের শিশু তাসকিনের দুরন্ত পায়ে খেলার মাঠে ছুটে বেড়ানোর বয়সে হাসপাতালের করিডরে দিন কাটছে। টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে ছোট্ট শরীরে। তাই ৩ বেলা শরীরে ফোটানো হচ্ছে সুচ, দিতে হচ্ছে ইনসুলিন। সেই সাথে দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়ার মতো শারীরিক জটিলতা তো আছেই।
আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এই শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মধ্যবয়সী কারো চেহারা। অথচ বাংলাদেশে তাসকিনের মত শিশুদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সে তথ্য জানেন না অনেক অভিভাবক। সচেতনতার অভাব বা জন্মগতভাবেই রোগটি বাসা বাঁধে কোমলমতি’দের শরীরে। এতে শৈশব থেকেই নিয়মনীতির বেড়াজালে আটকা পড়ে ছোট্ট জীবন। সেইসাথে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায়, সঠিক পরিচর্যা পায় না বহু শিশু। ফলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়েক হাজার খুদে প্রাণ।
সাধারণত শিশুদের বেলায় টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস বেশি ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হয়। যার খরচও অনেক। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন শিশুর ব্যয় টানতে প্রতি মাসে একটি পরিবারের খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। যা বহু পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়বেটিক ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে একটি জরিপ করে। সে হিসেবে একদিন থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি ১ লাখে টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশু প্রায় ৬ শতাংশ। প্রতিবছর যা বাড়ছে আশংকাজনক হারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সচেতনতা বাড়ালে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ অনেকাংশে সম্ভব। তবে নিয়ম মেনে চলতে হবে সারাজীবন।
সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে ডায়াবেটিসের ধরনেও। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে, সরকারকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
মুগদা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. মো. আবু সাঈদ শিমুল বলেন, তার পিপাসা বেশি থাকবে, পানি বেশি খেতে চাইবে, তার ক্ষুধা বেড়ে যাবে, প্রস্রাব করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। যদি দেখা যায় বাচ্চার অমনোযোগ হচ্ছে, আগের মত পারফরম্যান্স হচ্ছে না, খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে কিন্তু ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করতে পারে। আমরা যদি প্রতিরোধের দিকে মনোযোগ দিতে পারি। তাহলে শিশুদের ডায়াবেটিস অনেকটা নিরাময় করতে পারি।
বাডাস পেডিয়াট্রিক ডায়াবেটিস সেন্টার, বারডেম-২ এর ডিরেক্টর এন্ড হেড ডা. বেদৌরা জাবিন বলেন, টাইপ-টু কিন্তু প্রতিরোধ সম্ভব, টাইপ-ওয়ান না। কিছু কিছু ভাইরাস আছে, যেগুলো ছোটবেলায় আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে টাইপ-ওয়ান হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু কাদের হবে সেটা কিন্তু কোনো গবেষণায় এখন পর্যন্ত বের হয়ে আসেনি। চিকিৎসায় যে ইনসুলিন নেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার আহ্বান জানান তিনি।