অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বিএনপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৪; সময়: ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ |
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বিএনপি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিএনপির সব তৎপরতাই এখন নির্বাচন ঘিরে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিনেও সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়ায় দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির কথা বলছেন।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সামনের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যৌক্তিক কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করে তাহলে দলটি নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে। আর বিএনপির মধ্যে নানা ধরনের অশঙ্কাও কাজ করছে। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও আপাতত তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তাও নিশ্চিত নয়। কারণ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা সব মামলাই রয়ে গেছে। জামিন প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।

গত ৬ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ ও গতি প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেখানেই নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ চায়। তা না হলে তারা সরকারের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। আর রোডম্যাপ না পেলে মার্চ নাগাদ তারা আন্দোলনে যেতে পারেন। তবে বিএনপির নেতারা রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা স্বীকার করলেও মার্চে আন্দোলনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।

বিএনপি এই রোডম্যাপ নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের সঙ্গেও কথা বলছে। নির্বাচনে আন্দোলনের শরীকদের তারা কিছু আসন ছেড়ে দেবে। এরই মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিত না থাকায় বিএনপির মধ্যে নানা সংশয়ও কাজ করছে। তার মধ্যে ওয়ান ইলেভেনের সময়ের টু মাইনাস থিওরি নিয়েও কেউ কেউ কথা বলছেন। তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন না কারণ চিকিৎসকরা এখানও তাকে অনুমতি দিচ্ছেন না। আর তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করা হচ্ছে। যদিও ড. ইউনূস সাহেব তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার করিয়ে নিচ্ছেন। আমি মনে করি তিনি এটা ঠিক করছেন না। তারও আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত। শেখ হাসিনা তার মামলা নিজের ইচ্ছে মতো প্রত্যাহার করিয়ে কিন্তু সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাইনাস করার যদি প্রবণতা থাকে তার সঙ্গে সামর্থ্য থাকার প্রশ্নও জড়িত। বর্তমান সরকারের মাইনাস করার সামর্থ্য আছে বলে আমি মনে করিনা। বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল , এর শিকড় দেশের মানুষের মধ্যে। অতীতে অনেক চেষ্টা হয়েছে বিএনপিকে ভাঙার কিন্তু সফল হয়নি।

কত কয়েকদিন ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী রোডম্যাপের সঙ্গে সরকারেরও সমালোচনা করেন।

সর্বশেষ শনিবার তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে ঢাকায় এক দলীয় সভায় বলেন, তিন মাস পরে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক বা অন্যায্য নয়। সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ তা সহজভাবে মেনে নেবে না। আমি আগেও বলেছি, সংস্কারকাজ করতে গিয়ে অগ্রাধিকার বাছাইয়ে যদি ভুল হয় তাহলে তা জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

একই দিন ঢাকায় আরেকটি অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হলে অনেক বিতর্কের অবসান হবে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সেটি খুব জরুরি এই মুহূর্তে।

আর এক সপ্তাহ আগে তারেক রহমান বলেন, ভোট হতে হবে। ওই ডামি নির্বাচন হতে পারবে না, নিশিরাতের ভোট হতে পারবে না, দিনের আলোতে ভোট হতে হবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে, নিরাপদে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যা বলছেন

৬ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছিলেন কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, যদি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রোডম্যাপ না দেয় তাহলে তো দেশের মানুষ অন্ধকারে থাকবে। বিদেশেও কেউ জানতে পারছেনা বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কেউ তো কিছু জানতেই পারছে না আসলে কী হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে। রোডম্যাপ দেয়া হলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। অস্থিরতা কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কমিশন হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু রোডম্যাপ তো থাকতে হবে। কোনো অনির্ধারিত সময় তো হতো পারেনা। তাদের বুঝতে হবে এটাতো একটি ট্রানজিশনাল সরকার। তাদের মূল কাজ হলো একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এটাইতো তাদের মূল কাজ। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো তিনমাসে ভোটার তালিকা ঠিক করে, প্রশাসন ঠিক করে নির্বাচন করেছে।

তার কথা, আমরা সময়সীমা বেধে দেব কেন? আর যৌক্তিক সময়ের ব্যাপারে তো এ দেশের মানুষের ধারণা আছে। সরকারেরই দায়িত্ব হলো রোডম্যাপ ঘোষণা করা। তাদেরই দায়িত্ব কোন সময়ের মধ্যে তারা কী করবে তা দেশবাসীকে জানানো। আমরা তখন দেখব ওই সময় যৌক্তিক কী না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা তো সরকারকে বার বার বলছি রোডম্যাপের জন্য। এটা তো আমাদের দায়িত্ব। দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপের জন্য বলছি। কারণ একটি রোডম্যাপ ছাড়া তো কোনো কিছু পরিষ্কার হচ্ছে না। সরকার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করুক। তারপর প্রয়োজন হলে আমরা যৌক্তিক হলে আরো কিছু সময় বাড়িয়ে দেবো।

তিনি বলেন, সরকারের ১০০ দিন বিবেচনা করে আমাদের মনে হচ্ছে এই সরকার কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না। আর সেই কারণেই তো আমরা বার বার সরকারকে বলছি রোডম্যাপের কথা বলছি। আশা করছি সরকার দ্রুতই রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। তিন মাস হয়ে গেল এরমধ্যে তাদের এটা করা উচিত ছিল। সংস্কার তো লাগবে। তার মধ্যে নির্বাচনের কাজও শুরু করতে হবে। আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলছি। কিন্তু সেটা তো আর অনন্তকাল হতে পারেনা। সরকারকে একটি নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেমের মধ্যে কাজ করতে হবে।

বিএনপির আরো কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার এখনো রোডম্যাপ না দিলেও বিএনপি একটি রোডম্যাপের কথা চিন্তা করেছে। আর তাতে সামনের বছরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চায় তারা। দেশের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তারা সেভাবেই নির্বাচনসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে। আর মার্চ থেকে তারা সেজন্য শক্ত অবস্থানে যাবে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের জন্য সরকারকে নানাভাবে পারস্যু করছি। সরকারের এখন উচিত দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্তে আসা।

আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের জন্যই মানুষ এত বছর যুদ্ধ ও সংগ্রাম করেছে। তাই নির্বাচনের বিষয়টি দ্রুত পরিষ্কার করা সরকারের দায়িত্ব। সূত্র- ডয়চে ভেলে

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে