২২ লাখ টাকার বিল বাড়ি যেতে পারছে না নুহা-নাবা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আটটি সফল অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে ৩২ মাস বয়সী দুই যমজ শিশু নুহা ও নাবার মেরুদণ্ড এবং শরীর আলাদা হয়েছে এবং তারা হাঁটতে ও খেলতে পারছে।
২০২২ সালে ১৩ দিন বয়সী মেরুদণ্ড জোড়ালাগা যমজ নুহা ও নাবাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হলে তাদের ভবিষ্যত ছিল অনিশ্চিত।
আটটি সফল অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে ৩২ মাস বয়সী এই দুই শিশুর মেরুদণ্ড এবং শরীর আলাদা হয়েছে এবং তারা হাঁটতে ও খেলতে পারছে।
চিকিৎসা সফল হলেও, যমজদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ টাকার একটি অমীমাংসিত হাসপাতাল বিল, যেটি ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তাদের পরিবারের জন্য এক দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ নিয়েছিলেন। তবে তার পদত্যাগের পর পরিবারটি যমজদের চিকিৎসা নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে যায়।
নুহা ও নাবা ২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করে। ওই বছর ৪ এপ্রিল তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পাঠানো হয় এবং ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ সালে তাদের প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। এরপর তাদের মোট আটটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে তাদের আর একটি অস্ত্রোপচার বাকি।
যমজদের বাবা আলমগীর রানা বলেন, “ডাক্তাররা বলেন, আমার মেয়ে এখন ভালো, তারা হাঁটতে পারে। তবে আরও একটি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, যা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে করতে হবে।”
তিনি বলেন, “৭ নভেম্বর আমাদের হাসপাতাল ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ২২ লাখ টাকার বকেয়া কেবিন ফি পরিশোধ না করায় আমরা যেতে পারছি না। পূর্ববর্তী সরকার তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল। এখন আমি উদ্বিগ্ন, যদি টাকা না দিই, তবে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে।”
যমজদের বাবা আলমগীর একজন পরিবহন শ্রমিক। তার মেয়েদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় থাকা অবস্থায় তিনি চাকরি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি জমি বন্ধক রেখেছি, ৬ লাখ টাকা ধার করেছি এবং কুড়িগ্রামের বাড়িটি আমাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ২২ লাখ টাকা কীভাবে ব্যবস্থা করব?”
তবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুল আলম এই সমস্যার সমাধানে আশাবাদী।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আর্থিক জটিলতা সমাধানের জন্য কাজ করছে। আলমগীর দ্রুত সমাধান চেয়ে বলেন, “লোকজন বলেছিল, একটি মেয়ে হয়তো মারা যাবে বা দুজনই পঙ্গু হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর রহমত ও ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় তারা আলাদা হয়ে সুস্থ এখন। আমি দোয়া করছি, হাসপাতাল আমাদের এই বোঝা ছাড়াই বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে।”