বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকল্প সূচনা ও ঝুঁকি মূল্যায়ন কর্মশালা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৪; সময়: ৩:৩১ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকল্প সূচনা ও ঝুঁকি মূল্যায়ন কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে মৌসুমি গড় তাপমাত্রা, তাপপ্রবাহ, খরা ইত্যাদি আবহাওয়ার প্রকোপ দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কৃষি ফসলের ধরণ এবং জলের গুণমান খুব প্রভাবিত হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এর সহায়তায় ‘কাল্টিভেটিং চেঞ্জ প্রজেক্ট’-এর আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কনফারেন্স হলে ‘প্রকল্প সূচনা ও ঝুঁকি মূল্যায়ন কর্মশালা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হায়াত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শামসুল ইসলাম।

এসিডির প্রকল্প সমন্বয়কারী আফতাবুন নাহার কাল্টিভেটিং চেঞ্জ প্রকল্পের প্রেক্ষাপট, ফলাফল ও কার্যক্রম সমূহ ব্যাখ্যা করেন।

এছাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মমিনুল ইসলাম, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল লতিফ সরকার; উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মানিক ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিন, উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম মমিনুল ইসলাম, গোদগাাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন প্রমুখ তাদের মতামত ও দক্ষতা তুলে ধরেন।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সমস্যা একটি জটিল বিষয়। এনিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এই অঞ্চলে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। ঠিকমত কৃষি জমিতে পানি দেওয়া দেওয়া যায়না। ডিপ টিউবওয়েল গুলোতে পানি আগের চেয়ে অনেক কম উঠছে। কৃষিবান্ধন এই অঞ্চলে ধানের পারিবর্তে কমপানি লাগে এমন খরাসহিঞ্চু ফসল আবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ধানের পরিবর্তে গম,ভূট্টা ও অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য বিএমডিএর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ কৃষকদের উৎসাহিত করছে। পানির অপচয় ও সাশ্রয়ের জন্য এজন্য আমাদের করা অতিব জরুরী। এছাড়াও গোদাগাড়ী উপাজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পুকুর আছে। সেগুলোতে পানি থাকে না। আবার মাছ চাষ হয়ে হয়ে। এসব পুকুরের মধ্যে প্রায় ১ হাজার পুকুর ভারাট হয়ে গেছে। এসব পুকুর গুলো উদ্ধার করে চাষের আওতায় এনে কাজে লাগালে অনেক উপকার হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মমিনুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু মোকাবেলায় এই অঞ্চলে ধানের পরিবর্তে অন্য ফসল ফলানোর জন্য কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কৃষকদের বুঝাতে গেলে ধানের আবাদ হতে বেরিয়ে আসতে চায় না। আমরা এখন থেকে কৃষকদের খরা সহনশীল ফসল আবাদের জন্য বলছি। কৃষকরা এমন উদ্যোগে সারা দিলে অনেকটা জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কাজে লাগবে বলে জানান।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে কৃষিকাজে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনের সক্ষমতা, জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে আদিবাসী নারীদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় ৪ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হয়ে জলবায়ুজনিত চাপ, দ্বন্দ্বজনিত ঝুঁকি, ঝুঁকি মোকাবেলায় করনীয় এবং সহনশীলতা ও সক্ষমতা বিষয়ে দলীয় আলোচনা করা হয়।

রাজশাহীর জলবায়ু, অন্যান্য ঝুঁকি ও তার সহনশীলতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে কিছু সুপারিশসমূহ উঠে আসে। যেমনঃ টেকশই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, দ্বন্দ্বজনিত ঝুঁকি সমাধানে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, নায্য সম্পদ বন্টণ নিশ্চিত করা, জলবায়ু সহনশীল কৃষি অনুশীলনকে উৎসাহিত করা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং একই সাথে সর্বসাধারন, সরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সহযোগিতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে