শবে কদরের অন্বেষণে থাকুন

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২০; সময়: ১:৪৬ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
শবে কদরের অন্বেষণে থাকুন

হোছাইন আহমাদ আযমী : কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা কদর : ১-৩)

হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান থাকবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭৬০; সহীহ বুখারী হাদীস : ২০১৪)

সুতরাং এই ফযীলত লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। অন্তত ইশা ও ফজর যদি জামাতের সাথে হয় তবুও সারারাত নামায পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে এবং শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত লাভ করা যাবে। কারণ এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইশা ও ফজর জামাতের সাথে পড়ল সে যেন সারারাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ল। (সহীহ মুসলিম হাদীস : ৬৫৬; মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪০৮)

শেষ দশকে ইতিকাফ করুনঃ
শবে কদর লাভ করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল শেষ দশকে ইতিকাফ করা। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ কর।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ কর।’ (সহীহ বুখারী হাদীস : ২০১৭; ২০২০)

নির্দিষ্টভাবে সাতাশের রাতকে শবে কদর বলা ঠিক নয়। কারণ হাদীসে শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। তাই শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদাত করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মাঝের দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতিকাফ শেষ করার পর যখন রমযানের একুশতম রাত এল তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ আমাকে শবে কদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের অমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। … সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবে কদর খোঁজ কর।’ (সহীহ বুখারী হাদীস : ২০২৭; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৬৭)

সুতরাং বুঝা গেল যে, শেষ দশকে যে ইতিকাফ করবে তার শবে কদর নসীব হবে। মাসনূন ইতিকাফ দশ দিন। যাদের দশ দিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই বা সাহস হয় না তারা দুই তিন দিন নফল ইতিকাফ করতে পারেন। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও যমীনের দূরত্ব থেকে অধিক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। (শুআবুল ঈমান হাদীস ”: ৩৯৬৫)

সাতাশ রমজানের রাতেই কি শবে কদর?
অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এই ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০২০, সহীহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯)

অন্য হাদীসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫)

তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

রমাযানের শেষ দশকের ফযীলতই সবচেয়ে বেশি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭১)

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে