স্বীকৃতি না পাওয়া রাজশাহী কলেজের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২০; সময়: ৪:৪২ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
স্বীকৃতি না পাওয়া রাজশাহী কলেজের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম

ওয়ালিউর রহমান বাবু : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজশাহী কলেজের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম একজন। রাজশাহী জেলা সদরের হড়গ্রাম মুন্সিপাড়ার রাবেয়া খাতুন ও রুহুল আমিন সরকারের বড় সন্তান শামসুল আলম তখন রাজশাহী কলেজের ডিগ্রীর ছাত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের নির্দেশনায় নিজেকে প্রস্তুত করে ফেললেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রাজশাহী কলেজের কৃতি ছাত্র শামসুল আলম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকশন অপারেশন তীব্র হচ্ছে। পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের দোসররা চরমভাবে মার খাচ্ছে। ঠিক এমন সময় ১১ নভেম্বর ২১ রমজান বৃহস্পতিবার রাজাকাররা রাজশাহী জেলা সদরের কোর্টের পশ্চিমে রায়পাড়া থেকে তার সঙ্গী হেলেনকে ধরেছে এ খবর পেয়ে তিনি সঙ্গী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র সানাউল্লাহ্ সাথে কথা বলে নিরাপদ স্থানে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সানাউল্লাহ্ বাড়ি ফিরে দেখলেন বাবা বাড়িতে নাই তাবলীগে গেছেন, ফলে তিনি শামসুল আলমকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারলেন না। রাজাকাররা গভীর রাতে হেলেনকে ধরে সানাউল্লাহ্ বাড়ির সামনে এনে বাড়িটিতে লুটপাট করে সানাউল্লাহ্কে ধরে ফেললো। শামসুল আলম, হেলেন, সানাউল্লাহ্, তালেব, সুরুজ, সাইদুর রহমান একই গ্রুপের। রাজাকাররা হেলেন ও সানাউল্লাহ্কে ধরে তাদের সঙ্গী শামসুল আলমকে ধরার জন্য তাদের ধরে শামসুল আলমের বাড়ির সামনে নিয়ে এসে গান পয়েন্টে রেখে তাকে না পেয়ে তাদের সঙ্গী সুরুজকে ধরতে গিয়ে সুরুজ ও শামসুল আলমকে ধরে ফেললো।

শামসুল আলমকে চিনতে না পেরে তারা তাকে ছেড়ে দিলে একজন তাকে ধরিয়ে দিল। তাদের সকলকে রাজশাহী জেলা সদরের কোর্ট ষ্টেশনের পার্শ্বে ফাল্গুনী নামের বাড়িতে করা টর্চার ক্যাম্পে বন্দি করে রেখে নির্যাতন করার পর পরের দিন ১২ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানী সৈন্যদের খবর দিয়ে ধরিয়ে দিলে তারা তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করতে থাকলো। শামসুল আলম ও সানাউল্লাহ্কে ঘরে ঢুকিয়ে বন্দি করে রাখলো। বিকেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা সংকটজনক অবস্থায় হেলেন ও তালেবকে ঘরে এনে বন্দি করে রাখলো। মধ্য রাতে (১৩ নভেম্বর) তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের তিন তলায় লাইন করিয়ে পিছনে হাত বেঁধে হলের নিচে নামানোর সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক সিন্ধি অফিসার সানাউল্লাহ্কে ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে ফেলে দিলেন (সানাউল্লাহ্ ঐ সিন্ধি অফিসারের ভাইয়ের মতো দেখতে, তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্র)। সানাউল্লাহ্ বেঁচে গেলেন। শামসুল আলম ও অন্যদের নিচে নামানোর কিছুক্ষন পর গোঙ্গানির শব্দ শোনা গেল। গোঙ্গানির শব্দ থেমে গেলে একপাল কুকুরের চিৎকার শোনা গেল। বধ্যভূমির এই কুকুরগুলো শহীদদের রক্ত ও দেহ খেত। শামসুল আলমের কথা কেউ আর বলতে পারলেন না। তিনি শহীদ হলেন, বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজশাহীর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার পরিবারকে চিঠি ও একটি চেক পাঠান এই পর্যন্তই।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেও রাজশাহী কলেজের এই কৃতি ছাত্র শামসুল আলম বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হলো না। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা শুধু প্রজন্ম নয় অনেকেই জানে না। তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তার অবদানকে স্বরণীয় করে রাখতে জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ, রাজশাহী প্রেস ক্লাব বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে তাদের স্মরণ সভায়।

লেখক : ওয়ালিউর রহমান বাবু, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক, রাজশাহী
০১৯১১৮৯৪২৬০

তথ্য সূত্র : ড. সানাউল্লাহ্।

  • 184
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে