নওগাঁর করোনা চিকিৎসায় বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ, অক্সিজেন সংকট

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২১; সময়: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ |
নওগাঁর করোনা চিকিৎসায় বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ, অক্সিজেন সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চলতি বছরে ৩ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেই টাকার একটি টাকাও ব্যবহার করা যায়নি। আর গত বছর বরাদ্দ দেওয়া ৩ লাখ টাকার মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। বাঁকি টাকা এখনও অব্যবহৃত পড়ে আছে। জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া অক্সিজেন সরবরাহ দিতে না পারায় জেলায় কোভিডসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য বর্তমানে যে পরিমান অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে বর্তমানে তাঁর অর্ধেকরই বেশি সিলিন্ডার খালি রয়েছে। ফলে অক্সিজেন সংকটে রোগীদের কৃত্রিম অক্সিজেন সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের ব্যবহারের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভসসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং এছাড়া স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খরচ বাবদ বিশেষ ভাতার জন্য গত বছর ৩ লাখ টাকা এবং চলতি বছরে ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও গ্লাভসসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনা বাবদ বিশেষ বরাদ্দের কিছু টাকা খরচ করলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিন ও পরিবহন খরচের জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য তাই সেই টাকা খরচই হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

বরাদ্দ পাওয়া টাকা কেন খরচ করা যায়নি এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিস ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন তিনজন চিকিৎসক ১ হাজার ৮০০ টাকা করে এবং দ্বায়িত্বরত নার্সের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেককে ৬৫০ টাকা করে বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে।

এই খাতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে বলা হয়েছে, সেই অনুযায়ী টাকা খরচ করলে বরাদ্দ দেওয়া টাকা এক থেকে দুই মাসের মধ্যে খরচ হয়ে যাবে। এই কারণে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গত বছরের বরাদ্দ পাওয়া টাকার প্রায় ৪০ শতাংশ এখনও অব্যবহৃত ভাবে পরে রয়েছে। এ বছর ৩ লাখ টাকা পেলেও সেই টাকা এখনও উত্তোলনই করা হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে তিনটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। বাঁকি সাতটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিলিন্ডার অক্সিজেন ব্যবহার করে কোভিড ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কাগজেকলমে জেলার ১০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৩৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে অর্ধেকেরও বেশি সিলিন্ডার খালি পড়ে রয়েছে।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩৩৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে ১৯৫টি সিলিন্ডারই খালি রয়েছে। অক্সিজেন না থাকায় এবং করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও বর্তমানে ৯টি সিলিন্ডারই খালি রয়েছে। হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য ৫টি শয্যা থাকলেও আজকে দুপুর পর্যন্ত ১৫ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড গুলোতে আরও অনেক রোগী শ্বাস কষ্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। এ অবস্থায় রোগীদের কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালগুলোর সিলিন্ডারে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে পারে। গত এক মাস আগে সাতটি খালি সিলিন্ডার ভর্তির জন্য বগুড়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে দিয়ে আসলেও তারা এখনও ওই সব সিলিন্ডারে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে পারেনি। এছাড়া বর্তমানে আরও দুটি সিলিন্ডার খালি হাসপাতালে পড়ে আছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫টি শয্যা থাকলেও ভর্তি রয়েছে ১৫ জন রোগী। রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক ও হাসপাতালের স্টাফদের জন্য ব্যবহৃত দুটি কক্ষকে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে বাড়তি ১০ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন উপজেলার নির্মইল গ্রামের বাসিন্দা জিনাত আরা (৬৫)। তাঁর ছেলে জিয়াউল হক বলেন, আমার মা ২ দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মায়ের অক্সিজেন লেভেল বেশির ভাগ সময় ৯৪ শতাংশের নিচে থাকছে। এজন্য মাঝে মাঝেই তাঁকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। কিন্তুু হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় শ্বাসকষ্ট উঠলেও হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সেবা দিতে পারছে না। তাই চিন্তা করেছি আজকেই আমার মাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করাবো। ওখানে নাকি অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ বলেন, শুধু নওগাঁতেই নয়, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশেই কৃত্রিম অক্সিজেনের একটা সংকট দেখা দিয়েছে। স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ দিতে চুক্তিবদ্ধ। কিন্তুু তাঁরা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন মাফিক অক্সিজেন সরবরাহ দিতে পারছেনা। ফলে অনেক সিলিন্ডার খালি পড়ে আছে। আমরা স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের বগুড়া অঞ্চলের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কিন্তুু তিনি বলছেন, তাঁদের কাছে এই মূহূর্তে অক্সিজেন সংকট চলায়, তাঁরা অক্সিজেন দিতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া টাকা অব্যবহৃত থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, বরাদ্দের এই টাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকার ব্যবস্থাপনা সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। নওগাঁয় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ২৩ এপ্রিল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে