বিধিনিষেধের বলয়ে দেশ

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২১; সময়: ১১:২০ অপরাহ্ণ |
বিধিনিষেধের বলয়ে দেশ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ আজ সোমবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হচ্ছে। এদিন থেকেই সারাদেশে গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল, পর্যটনস্পট ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। তবে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ শুরু হবে বৃহস্পতিবার থেকে। রোববার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এসব কথা বলা হয়।

এর আগে গত শুক্রবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা জানানো হয়েছিলো। তবে শনিবার সরকারের উচ্চপদস্থ এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ শুরু হলেও সর্বাত্মক বিধিনিষেধ শুরু হবে বৃহস্পতিবার থেকে। অর্থবছরের শেষ সময় হওয়ায় লকডাউনের সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।

মন্ত্রিপরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ব্যতীত সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

সকল শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেয়া করতে হবে। জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরো প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ১৪ দিনের সর্বাত্মক শাটডাউনের সুপারিশ করে বৃহস্পতিবার। যদিও সরকার শাটডাউন নয়, এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এই সময়সীমা আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যেটি লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পায়। কয়েক মাস কার্যত অচল থাকে গোটা দেশ। পরে সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবকিছুতেই বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়। প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে দেশ। করোনা সংক্রমণ গত বছরের শেষ দিকে এমনকি চলতি বছরের শুরুর দিকে তিন শতাংশের নিচে নেমেছিল।

কিন্তু সংক্রমণের সেই নিম্নগতির ধারা ধরে রাখা যায়নি পরবর্তী সময়ে। চলতি বছরের মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হতে থাকে। এপ্রিলের শুরুতে সরকার দেশে বিধিনিষেধ এবং ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন জারি করে। লকডাইন চলে সপ্তাহ খানেক, তবে টানা কয়েক বিধিনিষেধ চলার পর সংক্রমণ কমে আসায় শিথিল করা হয় সবকিছু।

করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা আবার অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে শাটডাউনের সুপারিশ করে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার ১০ দিন পর প্রথম কোনো করোনা রোগী মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কয়েক মাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন শনাক্তের হারও ৫ শতাংশের নিচে নেমেছিল। তবে গত মার্চ মাস থেকে মৃত্যু ও শনাক্ত আবার বাড়তে থাকে।

এর মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল দেশে দৈনিক মৃত্যু একশো ছাড়ায়। সেদিন ও তার পরদিন ১৭ এপ্রিল ১০১ করে মৃত্যু হয় করোনায়। ১৮ এপ্রিল ১০২ জন ও ১৯ এপ্রিল ১১২ জন মারা যান। আর রোববার (২৭ জুন) গত একদিনে ১১৯ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে