চারঘাটে পদ্মার পানির সাথে বাড়ছে মানুষের মাঝে আতঙ্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২১; সময়: ৯:২৫ অপরাহ্ণ |

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উজান থেকে বেয়ে আসা পানি ও অসময়ের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকা গোপালপুর, পিরোজপুর, রাওথা,চন্দনশহর, ইউসুফপুর, টাঙ্গনের মানুষেরা ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বছরের পর বছর ভাঙ্গনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাওথার একটি মসজিদ ও নদীতীরবতী অসংখ্য বসত ঘরবাড়ি।

নদী ভাংগনের কবলে পড়ে নদী তীরবতী এলাকায় অনেক মানুষ বাড়িঘর অসহায় সম্বল এমনকি ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সর্বনাশা পদ্মার করাল গ্রাসে প্রতিবছর একটু একটু করে ভিটে-মাটি হারিয়ে অনেকে হচ্ছেন গৃহহীন ও ভুমিহীন। ভাঙ্গনের কবলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে হাজরাহাটির পুরো মৌজা, চন্দনশহরের অধিকাংশ এলাকা, রাওথা ও পিরোজপুর মৌজার অনেক এলাকা। এ বছর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙ্গন প্রকট হলে উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান চারঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার তজলুল হক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউসুফপুর ইউনিয়নের টাঙ্গন ও রাওথা গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। রাওথা চাটাইপাড়ার এলাকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা ফকির মোহাম্মদ (৭০) ও মুনছার (৬০) বলেন, আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। কখন জানি নদীর পানির জোয়ারে কাচাঁবাধ ভেঙ্গে চাটাইপাড়া জামে মসজিদ ও আমাদের বসতবাড়িঘর নদী গর্ভে চলে যায়।

একই গ্রামের মনোয়ারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বর্ষায় আমার বাড়ির জমির কয়েক ফুট করে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

রাওথার দত্তপাড়া গ্রামের আব্দুস জামালের স্ত্রী মজিফা বলেন, আমাদের বাড়িটি নদীতীর হতে মাত্র কয়েক ফুট দুরে অবস্থিত। বৃষ্টি ও উজানের পানিতে এরই মধ্যে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। দ্রুত নদীর তীরে পাকাঁ বাধ না দিলে চলতি বর্ষায় আমাদের বাড়ি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।

জানা গেছে, চারঘাট সীমানায় পদ্মার প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তীরবর্তী এলাকা রয়েছে। যার অধিকাংশ তীরবর্তী জায়গায় মানুষ বসবাস করে। এই তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৮ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকা ব্লক দিয়ে পাঁকা বাঁধ দেয়া আছে। বাকি তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত বা কাঁচা বাঁধ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে বাধে ভাঙ্গন ধরলে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় বালু ভর্তি জিওবি ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে কাচাঁ বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাধ রক্ষায় তা অকার্যকর।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফকরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলে তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা কষ্টে জীবনযাপন করে এটা ঠিক, তবে এই নদী ভাঙ্গন রক্ষার্থে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নদী ভাঙ্গনে জিওবি ব্যাগ ফেলে ফাটল বন্ধ করা ও ডামবিং মাধ্যমে নদী বাঁধ রক্ষা করার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমের পানি বৃদ্ধির সময় বাধ ভাঙ্গন বা ফাটল ধরলে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পাকা বাঁধ তৈরি আশ^াস দিলেও পাকা বাঁধ নির্মাণের জন্য কোন উদ্যোগ দেখা যায় না।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোর্তুজা বলেন, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষার্থে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং এবং চারঘাট ও বাঘা উপজেলার ৫ হাজার ১০০ মিটার ব্লক দিয়ে পাকা বাঁধ তৈরি হবে। এর মধ্যে চারঘাট উপজেলার রাওথা ও টাঙ্গনে এক হাজার ৫০০ মিটার পাকা বাঁধ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁেধর কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নদীর বাধ নির্মাণ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে টাঙ্গন ও রাওথার কাচাঁ বাঁধ ব্লক দিয়ে পাকা বাধ তৈরির কাজ শুরু হবে। পাকা বাঁধ তৈরি সম্পন্ন হলে এসকল নদী তীরবতী এলাকাগুলো নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। তবে সাময়িকভাবে জিওবি ব্যাগ ফেলে ফাটল বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

  • 112
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে