রাজশাহীতে পুলিশ কর্তা পরিচয়ে প্রতারণায় ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১; সময়: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে পুলিশ কর্তা পরিচয়ে প্রতারণায় ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের ফোন করে নিজেকে কখনো ডিআইজি, কখনো এসপি, কখনো এএসপি, কখনো থানার ওসি অর্থাৎ পুলিশের সিনিয়র অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার রাজশাহী জেলা পুলিশের একটি দল নওগাঁর মান্দার তেতুলিয়া ইউনিয়নের সাবাইহাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চকসাবাই গ্রামের সুনীল পন্ডিতের ছেলে সুমন পন্ডিত (৪০), কেশবপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে জাকারিয়া (৩৫) ও বাংড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে সাগর হোসেন (২২)। এদের মধ্যে জাকারিয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

পুলিশ জানায়, গত ১৩ আগস্ট প্রতারক চক্রের একজন সদস্য জেলা পুলিশ রাজশাহীর কট্রোলরুমের ল্যান্ড ফোনে ০১৭৩৮-৭৪৩৩৩০ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে মোহনপুর থানার ডিউটি অফিসারকে উক্ত নম্বরে ফোন দিতে বলে। তখন জেলা পুলিশ কট্রোলরুম মোহনপুর থানার ডিউটি অফিসারকে উক্ত নম্বরে ফোন দিয়ে কথা বলার জন্য বলে।

এরপর মোহনপুর থানার ডিউটি অফিসার ০১৭৩৮-৭৪৩৩৩০ নম্বরে ফোন দিলে প্রতারক চক্রটি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে মোহনপুর থানার পাশে কোন বিকাশের দোকান আছে কি-না জানতে চায় এবং বিশেষ প্রয়োজনে ০১৭০৬-৩৮৩৩৩২ নম্বরে দ্রুত ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয়ে দিয়ে বিকাশ যোগে টাকা পাঠানোর বিষয়টি ডিউটি অফিসারের নিকট সন্দেহ হলে তিনি মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে বিষয়টি জানান।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) স্যারকে জানালে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ০১৭০৬-৩৮৩৩৩২ নম্বরে বিকাশে টাকা পাঠাতে নিষেধ করেন ও জেলা গোয়েন্দা শাখাকে প্রতারক চক্রের বিষয়টি উদঘাটন করে প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজার নেতৃত্বে একটি টিম নওগাঁ জেলার মান্দা থানাধীন সাবাই হাট এলাকা থেকে ১৩ অগস্ট বিকেলে জাকারিয়া, সাগর ও সুমন পন্ডিতকে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের দেহ তল্লাশি করে একটি পুরাতন নোকিয়া মোবাইল ফোন, একটি পুরাতন ম্যাক্সটেল মোবাইল ফোন ও একটি জাল ভোটার আইডি কার্ড পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে প্রাপ্ত টাকা বিকাশের দোকান হতে উত্তোলনের সময় জাল ভোটার আইডি কার্ডটি ব্যবহার করে। বিভিন্ন সময় তারা নিজেদের পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকে।

প্রতারণার এই কাজে তাদের সাথে আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে। এছাড়া নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাকালে গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া স্বীকার করে যে, তার নিকট একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র লুকায়িত অবস্থায় রাখা আছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রটি কোথায় কিভাবে লুকায়িত অবস্থায় রেখেছে তা জানার পর রাজশাহীর পুলিশ স্যারের দিকনির্দেশনায় রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ডিবির ইন্সপেক্টর আতিকুর রেজাসহ সঙ্গীয় গোয়েন্দা শাখার একটি টিম বিশেষ অভিযান চালায়।

শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানাধীন টাংগন গ্রামের একটি গলির মধ্যে বালির বস্তা ও বিছানো ইটের নিচ হতে জাকারিয়া নিজ হাতে সাদা স্বচ্ছ পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও চার রাউন্ড গুলি বের করে দেয়। ঘটনা সংক্রান্তে মোহনপুর থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় পৃথক পৃথক ০২টি মামলা রুজু হয়েছে। পাশাপাশি প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে সচেষ্ট রয়েছে রাজশাহী জেলা পুলিশ।

  • 213
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে