সকল ক্যান্সার রোগীর জন্য সমান যত্ন আর চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২; সময়: ২:০৪ অপরাহ্ণ |
সকল ক্যান্সার রোগীর জন্য সমান যত্ন আর চিকিৎসা সেবা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ২০০৮ সাল থেকে ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল বা “ইউ আই সি সি”এর উদ্যোগে সারা পৃথিবীতে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ক্যান্সারকে প্রতিরোধের উপায়, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় এবং এর চিকিৎসার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্য নিয়েই এ দিবসটি পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো- সকল ক্যান্সার রোগীর জন্য সমান যত্ন আর চিকিৎসা সেবা।

আগামী তিন বছরের (২০২২ থেকে ২০২৪ সাল) জন্য একটি থিম নির্ধারণ করেছে “ইউ আই সি সি”। থিমটি হচ্ছে – “Close the Care Gap” – যার মোদ্দা কথা হচ্ছে সকলের জন্য সমানভাবে মানসম্মত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

একথা অনস্বীকার্য যে গত দুই দশকে সারা দুনিয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। ক্যান্সার সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইম্যুনোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও টারগেটেড থেরাপি সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এই উন্নত চিকিৎসা সেবা সমস্ত মানবজাতি সমানভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। এই বৈষম্য কে দূর করার নিমিত্তেই “ইউ আই সি সি” এর এই পদক্ষেপ।

“Close the Care Gap” এই উদ্যোগের প্রথম বছরটিতে অর্থাৎ ২০২২ সালে সারা পৃথিবীর ক্যান্সার চিকিৎসা সেবার যে বৈষম্যগুলো রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করা হবে এবং বিশ্লেষণ করা হবে।
ক্যান্সার সেবার বৈষম্য এর ফলে অনেক মানুষ চিকিৎসা না পেয়েই কিংবা রোগ ধরা না পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খুঁজলে দেখা যাবে জাতিগত বৈষম্য, পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা, শিক্ষার অভাব সহ এরকম আরও অনেক কারণেই মানুষ ক্যান্সার সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়।

এই বৈষম্য দূর করতে হলে নানান দেশের, নানান জাতির মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের সেবা গ্রহণের দুর্ভোগের গল্প শুনতে হবে। তারপর কারণ খুঁজে একটা একটা করে সেই কারণ গুলো দূর করার চেষ্টা করলেই একমাত্র এই ক্যান্সার সেবা বৈষম্য কমানো সম্ভব।

এই যুদ্ধ শুধু ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল বা “ইউ আই সি সি”এর নয়, এই যুদ্ধ আমাদের সবার। সবাইকেই যার যার অবস্থান থেকে এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে এই সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখি।

আমরা চাই এমন একটি সচেতন সমাজ ব্যাবস্থা যেখানে একজন নারী তার নিজের শারীরিক সমস্যার কথা বলতে লজ্জা বা ভয় পাবে না। ক্যান্সার এর রোগী তা সে যে বয়সেরই হোক না কেন চিকিৎসা নেবার, ভালভাবে বাঁচার অধিকার তাঁরও আছে। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কেন এই সমাজ ব্যাবস্থার চোখে অবহেলিত। সেও তো মানুষ। সেও তো সমান চিকিৎসা সেবা, সহমর্মিতা আর যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখে।

আমাদের দেশেও ক্যান্সার এর চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কম অগ্রগতি হয়নি। ক্যান্সারের চিকিৎসার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পন্থা রেডিওথেরাপি। আজ থেকে পনের- বিশ বছর আগেও রেডিওথেরাপির যেই টেকনিকগুলো ছিল বাংলাদেশের মানুষের কাছে কল্পনারও অতীত সেখানে আজ বাংলাদেশে বসেই আমাদের রোগীরা 3D CRT, IMRT, IGRT, SBRT, SRS এর মত বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে। কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে।

এই যে উন্নত চিকিৎসা ব্যাবস্থার কথা বললাম এর বেশিরভাগই বড় বড় শহরকেন্দ্রিক। ফলে অনেক রোগীর কাছেই এসব চিকিৎসা এখনও হাতের নাগালের বাইরে। ক্যান্সার এর আধুনিক উন্নত চিকিৎসা সেবার বিকেন্দ্রীকরণ খুব জরুরী। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক যারা বিত্তবান রয়েছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল ক্যান্সার চিকিৎসার যে বিপুল উন্নতি তা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছান সম্ভব।

তাই বাংলাদেশের আপাময় জনসাধারণের কাছে আবেদন – আসুন আমরা একতাবদ্ধ হই, একসঙ্গে সমস্যা অনুধাবন করে এর সমাধানের পথ খুঁজি। ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল বা “ইউ আই সি সি”এর এই যুদ্ধে বাংলাদেশও শক্তভাবে সামিল হয়ে দেখিয়ে দিক আমরাও পারি, আমরাও পিছিয়ে নেই।

আমাদের স্লোগান হোক – ‘সকল ক্যান্সার রোগীর জন্য সমান যত্ন আর চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা চাই’।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে