পরকীয়ায় উধাও স্ত্রীকে ফিরে পেতে শিশু অপহরণ

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২২; সময়: ২:৫৫ অপরাহ্ণ |
খবর > জাতীয়
পরকীয়ায় উধাও স্ত্রীকে ফিরে পেতে শিশু অপহরণ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রাশেদুল ইসলাম আশুলিয়ার জিরানী বাজারে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। স্ত্রী নুরজাহান চাকরি করতেন গার্মেন্টসে। স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে সাত বছরের শিশু সন্তানকে ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান তিনি।

এতে শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন রাশেদ। তার ধারণা, স্ত্রীর সঙ্গে একই গার্মেন্টসে কাজ করা মিরা আক্তার সব জানেন। এ কারণে চেষ্টা করেও স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে মিরার দেড় বছরের শিশুকে অপহরণ করেন তিনি।

পরে অপহৃত ওই শিশুর অবস্থান জানতে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে উঠে। কিন্তু আসামি অজ্ঞাত হওয়ায় অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে স্ত্রীর সন্ধান জানতে না পেরে অপহরণের এক সপ্তাহ পর ফোন করে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে চাঁদা দাবি করেন রাশেদ। ২০ হাজার টাকা পেয়েও লাপাত্তা হয়ে যান তিনি।

অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণের দুই মাস পর শিশুটিকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সেই সঙ্গে রাশেদ ও তার ফুফু রোকসানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু আঁখি অজ্ঞাত যুবক কর্তৃক অপহৃত হয়। শিশুটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানার পাইক্কা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে।

সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তার স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাক শ্রমিক। তারা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় জনৈক আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

মামলার এজাহারের তথ্য মতে, অপহরণকারী অজ্ঞাত সেই যুবক ঘটনার কয়েকদিন আগে আলী হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তখন বাড়ির ম্যানেজার নেই বলা হলে তিনি কথা বলে চলে যান। অপহরণকারী আবার ঘটনার দিন বাসা ভাড়া নিতে আসেন।

সেই সময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় মিরা ও সাদ্দাম দম্পতির সন্তান আঁখি ও মিরাজ খেলাধুলা করছিল। অপহরণকারী কথাবার্তার একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশু আঁখির ভাই মিরাজকে কিছু টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকলেট কিনতে পাঠান। এর মধ্যে তিনি আঁখিকে কোলে নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।

ঘটনার পরদিন ১ এপ্রিল শিশুটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি শিশু অপহরণ মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব-৪ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, অপহরণকারী রংপুরে আত্মগোপনে রয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল র‌্যাব-১৩ এর সহযোগিতায় সোমবার (৩০ মে) রাতে রংপুর শহরে অভিযান চালিয়ে রাশেদুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে জনৈক রোকসানার হেফাজত থেকে দেড় বছরের অপহৃত শিশু আঁখিকে উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রাশেদ র‌্যাব-৪ কে জানায়, রাশেদুল ইসলাম দুই বছর ধরে আশুলিয়ার জিরানী বাজার কলেজ রোডে ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তানসহ বসবাস করে আসছিলেন। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি।

স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশুটির মা মিরা আক্তার আশুলিয়ায় একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। যার সুবাদে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। রাশেদের স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে সাত বছরের শিশু সন্তানকে ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। মাতৃহারা শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েন রাশেদ।

রাশেদের ধারণা ছিল, এসব ব্যাপারে জানতেন মিরা আক্তার। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বেশ কয়েকদিন ভিকটিমের মা মিরা আক্তারের কাছে স্ত্রীর ঠিকানা জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।

তবে তার দৃঢ় ধারণা ছিল মিরা সব জানেন, কিন্তু ইচ্ছে করে বলছেন না। পরে রাশেদ স্ত্রীকে ফিরে পেতে সাদ্দাম ও মিরা দম্পতির দেড় বছরের শিশু আঁখি আক্তারকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাদ্দাম-মিরা দম্পতি কাজে চলে যাওয়ার পরে গত ৩১ মার্চ সকাল পৌনে ১০টার দিকে অপহৃত শিশু আঁখি আক্তারের নানীর সঙ্গে বাসা ভাড়ার বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে কৌশলে শিশুর বড় ভাই পাঁচ বছরের মিরাজকে ১০ টাকা দিয়ে চকলেট খাওয়ার জন্য মুদি দোকানে পাঠান রাশেদ। এর মধ্যে শিশু আঁখিকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর অপহরণকারী রাশেদ শিশুটির বাবা-মাকে ফোন করে জানান, শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে শিশুটিকে ফেরত দেওয়া হবে।

ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রকৃতপক্ষে অপহৃত শিশুটির বাবা-মা রাশেদের স্ত্রীর ঠিকানা জানত না। যে কারণে তারা সঠিক ঠিকানাও দিতে পারেননি।

ধূর্ত রাশেদ স্ত্রীর সন্ধান না পেয়ে লোভের বশবর্তী হয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠানোও হয়। কিন্তু রাশেদ মুক্তিপণের টাকা উত্তোলন না করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি মোবাইল ব্যবহার করেননি।

রাশেদ ঘটনার দিনই অপহৃত শিশু আঁখিকে গাজীপুর কালিয়াকৈরের রতনপুরে তার ফুপু রোকসানার কাছে নিজের মেয়ে পরিচয়ে রেখে গ্রামের বাড়ি রংপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন।

উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু আঁখি আসামি রাশেদের ফুপু রোকসানার হেফাজতেই ছিল। নিঃসন্তান রোকসানার কাছে শিশু আঁখি যত্নেই ছিল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে