ইতিহাস ধরে রাখতে এক অনন্য সংগ্রহশালা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২২; সময়: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ |
ইতিহাস ধরে রাখতে এক অনন্য সংগ্রহশালা

তানজিলা চৌধুরী : কোনো জাতিকে জানতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হয় সে জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমাজ ও জাতির পথ চলাকে সমৃদ্ধ করে। ইতিহাসকে জানার ও ঐতিহ্য ধরে রাখার সেই চাহিদা পূরণের জন্যই রাজশাহী নগরীর বুকে রয়েছে “হেরিটেজ আর্কাইভস”। ইতিহাসের এক জীবন্ত সংগ্রহশালা এই আর্কাইভ।

রাজশাহী মহানগরীর কাজলা এলাকার জামরুল তলায় অবস্থিত এই হেরিটেজ আর্কাইভস। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় আর্কাইভটি। রাজশাহী বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান নিজ উদ্যোগে এই আর্কাইভটি প্রতিষ্ঠা করেন।  আর্কাইভসটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালের মার্চ মাসে। একতলা বিল্ডিং নিয়ে মাহবুবর রহমানের গড়ে তোলা সংগ্রহশালাটি ২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর অনুদানে ৩তলা বিল্ডিং নিয়ে বিস্তৃত হয়।

এরই মাঝে আর্কাইভসে সংগৃহীত হয়েছে ৩ হাজার ৯৫ শিরোনামে প্রায় ৩০ হাজার সাময়িক পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও গবেষণা জার্নাল। রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২০০ পোস্টার ও পাঁচ হাজার লিফলেট। সংগ্রহশালায় রয়েছে দেশের ৬৪ জেলার ওপর প্রায় ১০ হাজার গ্রন্থ, স্মরণিকা ও বার্ষিকী। রয়েছে ৪৭১টি এমফিল-পিএইচডি থিসিস এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

প্রায় ৩ হাজার ২০০টি জীবনী গ্রন্থ রয়েছে যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা জীবনী গ্রন্থ রয়েছে ৫৭২টি। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ গ্রন্থ, প্রায় ৫০০ রাজনৈতিক সাহিত্য। তাছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম, শ্রমিক, নারী, রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ ও ডকুমেন্টস, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার স্মরণিকা ও বার্ষিকী, ৫০টি বিষয়ে পেপার ক্লিপিং, দৈনিক পত্রিকার কয়েকশো ঈদ ও নববর্ষ সংখ্যা, প্রায় ৩০০টি বিষয়ে কয়েক হাজার গ্রন্থ এখানে সংগৃহীত হয়েছে।

১৮৭২ সালে করা প্রথম আদমশুমারির রিপোর্ট, ভূমি জরিপের রিপোর্ট, সরকারি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা দুষ্প্রাপ্য প্রতিবেদন, লিফলেট, পোস্টার, স্মরণিকা, ফেস্টুন, ব্যঙ্গচিত্রসহ গত ৫০ বছরের মূল্যবান সব জিনিসও চোখে পড়বে এই সংগ্রহশালায়।

হেরিটেজ আর্কাইভসের তৃতীয় তলার একটি অংশ জুড়ে রয়েছে পারিবারিক জাদুঘর। সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে পারিবারিক জীবনের বিলুপ্ত এবং বিলুপ্ত প্রায় সামগ্রী। এস দুষ্প্রাপ্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে পুরাতন ক্যামেরা, টেপরেকর্ডার, রেডিও, মাটির জিনিসপত্র, কাঁসার তৈজসপত্র, হারিকেন, হুঁকা,পানের বাটা, চশমা ইত্যাদি। এছাড়াও সেকালের বিয়ের শাড়ি, বিয়ের কার্ড, পুরাতন মুদ্রা, আমন্ত্রণপত্র সহ আরো নানান পুরাতন সামগ্রী।

আর্কাইভসটি প্রতিষ্ঠা করার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবর রহমান জানান, “দেশ ও জাতিকে জানার জন্য সে দেশের অতীত, সংস্কৃতি, ইতিহাসকে জানা প্রয়োজন। আমাদের দেশে গবেষকদের গবেষণার জন্য বিভিন্ন লাইব্রেরীর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু তবুও তারা সব তথ্য পায় না।

কারণ সেরকম সমৃদ্ধ কোনো লাইব্রেরি আমাদের দেশে নেই। আমি সবসময়ই ভাবতাম এমন কিছু করার যা আমাদের ইতিহাসকে ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে। ১৯৯৮ সালে নেদারল্যান্ডে যেয়ে এরকম সংগ্রহশালা দেখে সিদ্ধান্ত নেই এমন সংগ্রহশালা গড়ে তোলার।”

তিনি আরো জানান, প্রথমে তিনি তার নিজ বাসস্থানে সংরক্ষণ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে জমি কিনে আর্কাইভসটি গড়ে তুলেন। এই আর্কাইভস দেশের অতীতকে জানতে, ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে, গবেষকদের তাদের গবেষণায় সহায়তা করতে ভূমিকা রাখবে এই আশাতেই গড়ে উঠেছে হেরিটেজ আর্কাইভস।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে