মন রাঙানো পলাশ প্রকৃতিতে আগাম বসন্ত বিলাপ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩; সময়: ৬:০৮ অপরাহ্ণ |
মন রাঙানো পলাশ প্রকৃতিতে আগাম বসন্ত বিলাপ

সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি : এবারের বসন্ত আগমনের আগেই বিলাপ শুরু করেছে। তার আভাস এখনই দিয়েছে প্রকৃতি। তা না হলে ফাল্গুন ফাল্গুন চৈত্রের পলাশ এত আগেই চোখ মেলবে কেন। ঋতুগুলো বাঁধন ছিঁড়ে অধিকার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাল দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের পালার বৃক্ষরাজি। কে কত আগে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। যদিও মাঘ মাস পলাশের প্রস্ফুটনের সময়, ফাগুনের হাওয়া তা আরও দ্রুত করেছে।

বসন্তের মাতাল সমীরণে লালচে বর্ণচ্ছটায় মন রাঙানো পলাশ নিসর্গের আরেক রূপ তুলে ধরে।টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়।
এবার তা আগেই তুলেছে। বাতাসের মৃদুমন্দ তালে উঁচু গাছের শাখায় পলাশ দেখে কোন প্রকৃতিপ্রেমী পথিক সুন্দর স্বপ্নে মগ্ন হতেই পারে।

তাইতো এই পলাশ ফুল নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবু সৃষ্টি করেছিলেন–
আমায় গেঁথে দাওনা মাগো
একটা পলাশ ফুলের মালা
আমি জনম জনম রাখব ধরে
ভাই হারানোর জ্বালা…

শুধু পথিকেরই বা কেন। বাঙালী জীবনের সংস্কৃতির আবাহনে পলাশ ফুলের লালচে কমলা আভা হৃদয় সাজিয়ে দেয়। লালচে কমলা বর্ণচ্ছটার আবেগের ফুলগুলো ছন্দায়িত করে তোলে। স্মৃতির পাতা মেলে ধরলে সুর তোলে ও আকাশ কেন আজ এত আলো ছড়ায়ে। আকাশে রক্তিম আলো ছড়িয়েই যেন কথা বলে পলাশ। বাংলার এই মাটিতে পলাশের আগমন বহুকাল আগে।

পলাশ গাছ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। শীতে গাছের পাতা ঝরে যায়। এর বাকল ধূসর। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা। নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতা ত্রিপত্রী, দেখতে অনেকটা মান্দার গাছের পাতার মতো হলেও আকারে বড়।

বসন্তে এ গাছে ফুল ফোটে। টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। পলাশ ফুল ছোট, ফুল ২ থেকে ৪ সেঃ মিঃ লম্বা হয়।

পলাশের ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতো। বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গাতে কমবেশি পলাশ গাছ দেখতে পাওয়া যায়।পলাশ মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma। বৃক্ষটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। তবে পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

বাংলাদেশ,ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্ত‌ৃত।

বাংলা সাহিত্যে পলাশ ফুলের প্রসঙ্গ এসেছে নানাভাবে। কবি নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন-
হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল
এনে দে এনে দে নইলে
বাঁধব না, বাঁধব না চুল…

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক কবিতা ও গানেও পলাশ ফুলের উল্লেখ আছে। যেমন – দোলের গান, ওরে গৃহবাসীতে “রাঙা হাসি রাশি রাশি, অশোকে পলাশে’ বা ফাগুন হাওয়ায় হওয়ায় গানে “তোমার অশোকে কিংশুকে, অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে”।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে