সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে বড় রদবদল

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩; সময়: ৭:৩০ অপরাহ্ণ |
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগে বড় রদবদল

নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রীণ ও ক্লিন সিটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রাফিক বিভাগের সকল শাখায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছেন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান।

গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে আরএমপির দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি ট্রাফিক বিভাগ ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তিনি ট্রাফিক বিভাগের প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেন। এতে করে দীর্ঘ দিন দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগের কিছু সদস্যের অবৈধ সুবিধায় ভাটা পড়ে। এখন তারা ট্রাফিক বিভাগের নামে গুজব ছড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

আরএমপির একটি সূত্রমতে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ কমিশনার স্থানীয় পরিবহণ মালিকদের সাথে বসেছেন, তাদেরকে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। কথা বলেছেন জনপ্রতিনিধিদের সাথেও। সমালোচনা এড়াতে সার্জেন্টদের তিনি বডিওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার ও সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

নগরবাসীর দেয়া তথ্য মতে, বিশ্বায়নের উন্নতির ধারায় রাজশাহীর সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া দৃশ্যমান। এই মহানগরী বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। সেই চাপকে সুনিপুনভাবে মোকাবিলা করা না গেলে শহুরে যান্ত্রিকতায় দুর্ভোগের পরিসীমা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই যানবাহন মোকাবিলায় নগর পুলিশকে হতে হবে আরও তৎপর, আরও আধুনিক।

সূত্রমতে, আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্টের সংখ্যা মোট ২২ জন। এছাড়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) রয়েছেন ৫ জন। সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে সার্জেন্টরা আর্থিক জরিমানা করেন, এই জরিমানা আদায়ে যে ব্যবস্থাপনা এখন তার পুরোটাই ডিজিটাল। এই বিষয়টিকে আরও স্বচ্ছ করতে টিআই প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার উদ্যোগ নেন পুলিশ কমিশনার।

এতদিন নির্ধারিত একজন টিআই ট্রাফিক বিভাগের পুরো প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে সেই দায়িত্ব চলতি মার্চ মাস থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ৫ জন টিআই এর প্রত্যেককে পর্যায়ক্রমে এক মাস করে এই দায়িত্ব এখন থেকে পালন করতে হবে।

তবে পুলিশ কমিশনারের এমন উদ্যোগে ট্রাফিক বিভাগে এতদিন ধরে অবৈধভাবে সুবিধা পেয়ে আসা গুটিকয়েক সদস্যেরা নিয়ে থাকতো। তারা এতদিন অবৈধভাবে যে সুযোগ পেয়ে আসছিলেন তা বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক বিভাগের সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভাগটিকে সমালোচিত করতে মরিয়া।

ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, টিআই প্রশাসন পদটি ট্রাফিক বিভাগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন টিআই প্রশাসনের কাজ সমস্ত সার্জেন্টদের ডিউটি বা দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া, অর্থদণ্ডের স্লিপ তার তত্বাবধানেই থাকে। বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠনের সাথে তিনি লিয়াজো করা। এমনকি অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণও তার নেতৃত্বেই হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় ১ মার্চ থেকে এই টিআই প্রশাসনের পদে রদবদল আনেন পুলিশ কমিশনার। চলতি মাস থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচজন টিআই এর মধ্য থেকে এক জন করে টিআই প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করছেন।

আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে টিআই প্রশাসন পদটি আগলে ধরে রেখেছিলেন আতাউল আল কোরাইসী। তবে হঠাৎ নতুন সিদ্ধান্তে তাকে সেই দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়। ট্রাফিক বিভাগে থাকা তার অনুসারীরা এতে মনোক্ষুন্ন হন। টিআই কোরাইসীর তিলে তিলে গড়ে তোলা রাজত্বের অনিয়ম যাতে ফাঁস না হয় সে জন্য তিনি নিজেও তৎপরতা শুরু করেছেন।

আএমপির ট্রাফিক বিভাগের টিআই আতাউল আল কোরাইসী বলেন, টিআই প্রশাসন পদে বাইরোটেশনের যে সিস্টেম করা হয়েছে তাতে করে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের সাথে আমাদের লিয়াজোঁ থাকে। একেক মাসে একেকজন দায়িত্বে থাকলে এই সমন্বয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। ভারসাম্য নষ্ট হবে। নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে শতভাগ মামলা দিতে হবে। এতে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে।

টিআই প্রশাসনে রদবদল আনায় তিনি বা একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টিআই কোরাইসী আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গত মাসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। আমাদের সাথে সবার বন্ধুত্ব ছিল, আগামীতেও থাকবে।

আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অনির্বাণ চাকমা বলেন, ট্রাফিক বিভাগ পুলিশ বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ কমিশনার স্যার নির্দেশ দিয়েছেন। পরিচ্ছন্ন নগরীকে আরও সুন্দর রাখতে এর বিকল্প নাই।

তিনি আরও জানান, কোন একজন যদি দীর্ঘ দিন একটি পদে দায়িত্বে থাকে, তবে সেই ব্যক্তির হাতে সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ হয়ে যায়। তবে বাই রোটেশন (পর্যায়ক্রমে) যদি দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই জাগায় স্বচ্ছতা আরও বাড়ে। একারণেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিমাসে টিআই প্রশাসনে যদি দায়িত্বে পরিবর্তন আনা যায় তাবে সকল পক্ষের জন্য ভালো। পুলিশ কমিশনার স্যার টিআই প্রশাসন পদের জন্য নতুন যে নিয়ম করে দিয়েছেন তা আমাদেরকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে