রাজশাহীতে ভোটের মাঠে থাকতে চায় বিএনপির তৃণমূল!

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩; সময়: ৪:১৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ভোটের মাঠে থাকতে চায় বিএনপির তৃণমূল!

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পুরোদমে গণসংযোগ করছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করছেন। জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীরাও যথারীতি মাঠে নেমেছেন। মেয়র পদে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নিচ্ছে না।

তবে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন। বিএনপির দুর্ভেদ্য দুর্গখ্যাত রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভোটের লড়াইয়ে নামতে চান।

২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৯৮ হাজার ৩৮০ ভোট মেয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত খায়রুজ্জামান লিটন। বিএনপি সমর্থিত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট পান ৭৪ হাজার ৫৫০টি। ভোটের ব্যবধান ২৩ হাজার ৮১০টি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেবারই প্রথম আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী শহরটিতে জয়ের মুখ দেখে।

লিটনের পাঁচ বছরে রাজশাহী শহরের উন্নতি ছিল দৃশ্যমান। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যান ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী। সেই নির্বাচনে বুলবুল ভোট পান ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৬ ভোট। লিটনের বাক্সে পড়ে ৮৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। তিনি হারেন ৪৮ হাজার ৪০৭ ভোটে।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের ভোটে আবার খায়রুজ্জামান লিটনের জয় হয়। দলীয় প্রতীকে ওই নির্বাচনে নৌকা নিয়ে তিনি পান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বুলবুল পান ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট।

রাজশাহী সিটিতে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এবার পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এখানে এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ৩০ হাজার ১৫৭ জন। যারা প্রথমবার ভোট প্রয়োগ করবেন। এবার ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৩ ভোটকক্ষে ভোট হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন- ইভিএমে।

২১ জুনের নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপির দলীয়ভাবে কোনো তৎপরতা নেই। এ নির্বাচনে দল না আসার ঘোষণায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এককালে বিএনপির দুর্ভেদ্য দুর্গ রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারাও ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নামতে চান।

বিএনপির একাধিক তৃণমূল নেতা জানান, দল ভোটে আসুক তারা তা চান। কারণ এটি সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজের শহরের মেয়র কে হবেন সেখানে তাদের ভ‚মিকা থাকা দরকার। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হবেন। কিন্তু ভোটে না আসায় তারা সে সুযোগ হারাচ্ছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে দল যাবে না। ফলে আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। জনগণ ভোট দিতে না পারলে নির্বাচন করে লাভ কি? সিটি নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন।

বিশেষ করে খায়রুজ্জামান লিটন আবার প্রার্থী হওয়ায় আগে-ভাগে তারা ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একযোগে মাঠে নেমেছেন। ২৩ এপ্রিল থেকে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল­ায় নির্বাচনি কমিটি গঠন শুরু হয়েছে।

নির্বাচনের আগে ঈদ যেন ভোটের রাজনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় নির্বাচনের কাজে লাগাচ্ছেন মেয়র লিটন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য মহানগরীর উপশহরে নিজ বাসবভনের সামনে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। ঈদের ৫ দিন পরও সেখানে গণহারে মানুষ যাচ্ছেন; লিটনের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন; কোলাকুলি করছেন।

এতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় যেমন হচ্ছে, তেমনি গণসংযোগও হচ্ছে। ঈদ শুভেচ্ছার এসব কর্মসূচি আসন্ন নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া মেয়র লিটন নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ডাকা সভা-সমাবেশে তিনি উন্নয়নে বদলে যাওয়া রাজশাহীর কথা বলছেন। অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করতে নগরবাসীর আবারও সমর্থন চাইছেন।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা জনগণ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। ৫ বছর পর পর জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনছি। জনগণ নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন- তাদের জন্য আমরা কি করছি। যারা উন্নয়ন চায় না; দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়; তারাই নির্বাচনে আসছে না।

তিনি আরও বলেন, তবে আমি চাই, সব দলই নির্বাচনে আসুক। আমরা সবার সঙ্গে লড়াই করে জিততে চাই। কাউকে ছোট করে দেখছি না।

এদিকে, শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে অনেকটা মাঠ পর্যবেক্ষকের ভ‚মিকায় আছেন। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী নগরীতে গণসংযোগ করছেন।

জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন জানান, ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে আমাকে মেয়রপ্রার্থী হতে বলা হয়েছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ভোট করে তো কোনো লাভ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দেখলে আমি নির্বাচন করব। না হলে নয়।

১৯ এপ্রিল দলীয় মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এবার রাজশাহী মহানগর শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাওলানা ফারুকী কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ইমাম। লালমনিরহাটের ফারুকী কয়েক বছর আগে রাজশাহীর সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়েছেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে রাজশাহীতে হাতপাখা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। গত সিটি নির্বাচন আমাদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের ছিল। এবার আমরা অনেক বেশি ভোট পাব। ২০১৮ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট মুরাদ মোরশেদ।

এবার নির্বাচন করছেন না জানিয়ে মুরাদ মোরশেদ বলেন, আমাদের রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ভোটের মাঠ ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছি। সূত্র- যুগান্তর

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে