বৃষ্টি বিলাস
তরুচ্ছায়াঘন সন্ধ্যা লগ্ন
আষাঢ়ে আপন আঙ্গিনায়;
উত্তাল বায়ে তান্ডব প্রলয়ে
গায়ে বৃষ্টি আছড়ায়।
বজ্রনাদ আর বজ্রপাত,
চোখ ধাঁধানো আলো;
শত বিজলীর ঝলমলে আলোয়
নিমিষেই নিখোঁজ কালো।
শীতল বায় মন নাচায়
জুড়ায় তাপিত তনুমন।
খুশীর ছোঁয়ায় ভিজে বরিষায়
স্মরণীয় রাখি ক্ষণ।
ভেজা শেষে ঘরে এসে
ভাজভাঙ্গা পাঞ্জাবি পরে;
বাগান ঘেষে বাতায়ন পাশে
বসি বৃষ্টি দর্শনের তরে!
নিবিষ্ট মনে বৃষ্টির সনে
কী নিবিড় মরি মরি!
আষাঢ় মাসে পানি ভাসে,
ভাসে স্মৃতির লুকোচুরি!
স্তব্ধতা ভাঙ্গায় প্রেয়সী বাড়ায়
ধূমায়িত কফির পেয়ালা!
প্রিয়া, বৃষ্টি, কফির ছোঁয়ায়
চুমুকেই মন উতলা!
নন্দে ছন্দে ভাব তরঙ্গে
উচ্ছ্বসিত সিক্ত প্রান!
বাহিরে বজ্র-বৃষ্টি তুফান
উচ্চ শিরে চলমান!
দু-চার চরণ আবৃত্তি, স্মরণ,
গুনগুনিয়ে গাই গান।
এই মুহূর্তে জগলু বাদশাহ
তার জীবন মহীয়ান।
সহসা দৃষ্টি আম্রবৃক্ষে
ভীতসন্ত্রস্ত এক পত্রী!
নিমিষেই উড়ে পেঁপে পত্রে
কাক ভেজা অভিযাত্রী!
ডানা ঝাঁপটায় আশ্রয় চায়
চুপসে সে চুপচাপ।
ঝঞ্ঝা রাতে বিপদে-বিপথে
মুখাবয়বে নাই ছাপ।
বৃষ্টি বিলাস রেখে একপাশ
পাখীর জন্য ভাবনা;
কোথায় বাস? কোথায় আশ?
কোন সুদূরে ঠিকানা?
ঠিকানাবিহীন নিরাপত্তাহীন
উড়ে প্রান্তিক প্রান্তরে।
দুঃখ, হতাশা, অনুযোগ নাই
কোন ক্লেশ নাই অন্তরে!
মানব জীবন পাখীর জীবন
তফাৎ আকাশ পাতাল।
পেয়েও সব আক্ষেপ অনুভব
মানব অকৃতজ্ঞ চিরকাল।
পাখীর জীবন স্বাধীন
নির্মল ভাবলেশহীন!
মানব জীবন আবদ্ধ অধীন
শৃঙ্খলিত সুকঠিন।
কবিতাঃ বৃষ্টি বিলাস
কাব্যগ্রন্থঃ আলো-ছায়া
কবি এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ ভিলা, উত্তরখান, ঢাকা।