মুখরোচক স্বাদে ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৩; সময়: ১:৫৮ অপরাহ্ণ |
মুখরোচক স্বাদে ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি

আদিবা বাসারাত তিমা: মরিচ বাটা, পেঁয়াজ কুচি, সরিষার তেল দিয়ে বেগুন ভর্তার সাথে গরম কালাই রুটি ভোজন রসিকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মাসকালাই আর চালের আটার মিশ্রণে হাতে বানানো এই রুটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট ও মিনারেল। কালাই রুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও বর্তমানে রাজশাহীসহ সারা উওরবঙ্গের মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী মহানগরীর অনেক মানুষই কালাই রুটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাস্তার পাশে ফুটপাতে, পদ্মানদীর তীরে, পার্কের সামনে, ছোটখাটো বাজারসহ অনেক জায়গাতেই কালাই রুটির দোকান চোখে পড়ে। বছরের সব ঋতুতেই সমান তালে বিক্রি হয় এ রুটি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব দোকানগুলোতে ভোজন রসিকদের ভিড় জমতে দেখা যায়।

গনগনে উনুনে গরম গরম তৈরি হচ্ছে কালাই-রুটি। মুহূর্তেই তা ক্রেতাদের পরিবেশনও করা হচ্ছে। এখানে কেউ কালাই রুটি খাচ্ছেন মরিচ, পেঁয়াজকুচি আর বেগুন ভর্তা দিয়ে আবার কেউ হাঁসের মাংস, মাংসভুনাও নিচ্ছেন।

রাজশাহী কোর্ট এলাকায় কালাই রুটির দোকান খুলে ব্যবসা করতে দেখা যায় বেশ কিছু নারীদের। দুই থেকে তিনজন কর্মচারী নিয়ে এসব নারীরা নিজেরাই দোকান চালাচ্ছেন। আর এই ব্যবসা করে তারা হয়েছেন স্বাবলম্বীও।

এক সময় ফুটপাতের খাবার হিসাবে প্রচলন ছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার কালাই রুটির। কিন্তু ভোজনরসিকদের পছন্দের কারণে কালাই রুটি এখন রাজশাহীর রেস্তোরাঁর নিয়মিত খাবারে পরিণত হয়েছে। সাথে তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগও।

কালাই রুটি খেতে আসা শরিফুল ইসলাম জানান, কিছু দিন পর পরই কালাই রুটির স্বাদ নিতে উপশহরে আসা হয়। সাথে করে বন্ধুদেরও নিয়ে আসি। সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কালাই রুটি খেতে বেশ ভালো লাগে। তার মতে, হাঁসের মাংস ও ধনিয়া চাটনি দিয়েই এই রুটি বেশি সুস্বাদু।

কালাই রুটি খেতে আসা তানজিদ হাসান জানান, বেগুন ভর্তা আর পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে গরম গরম কালাই রুটি খেতে দারুণ লাগে। এটা আমি প্রথম খাওয়ার পর এত ভালো লেগেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এখন প্রায়ই কালাই রুটি খেতে আসি।

মাসুদা নামের নারী দোকানি জানান, ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। এরপর সংসারের দায়িত্ব এসে পরে তার কাধে। দুই ছেলে মেয়েসহ সংসারের খরচ যোগাতে কালাই রুটি বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। ২০ টাকা দামে বিক্রি করেন কালাই রুটি তবে স্পেশাল বললে আরও ১০ টাকা যোগ করতে হয়। প্রতিদিন রুটি বিক্রি করে আনুষঙ্গিক খরচ বাদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয় আর তা দিয়েই চলে মাসুদার সংসারের চাকা।

নগরীর রানী বাজারের ফুটপাতে কালাই রুটি তৈরি করছেন আব্দুল সামাদ। তিনি বলেন, আগে গ্রামে কালাই রুটি তৈরি করতাম। কিন্তু গ্রামের চেয়ে শহরে এই রুটির চাহিদা বেশি। তাই গ্রাম থেকে এসে ফুটপাতেই দীর্ঘদিন ধরে কালাই রুটির ব্যবসা করছি। বিকেলের পর থেকে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। তবে রাত ১১টা পর্যন্ত বেচা-কেনা চলতে থাকে।

কালাই রুটি দিয়ে এখন অতিথি আপ্যায়নও করা হয়। শুধু রাজশাহীর স্থানীয়রা নয় এই রুটি বিখ্যাত রাজশাহীতে ঘুরতে আসা হাজারো দর্শনার্থীদের কাছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে