স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চাই মানসম্মত শিক্ষা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩; সময়: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ |
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চাই মানসম্মত শিক্ষা

আসমা খাতুন : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে কয়েকটি বিষয় সবচেয়ে বেশি মনোযোগের দাবি রাখে মানসম্মত ও সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর করতে যোগ্য, উৎসাহী ও নিবেদিত শিক্ষক, সচেতন অভিভাবক এবং দক্ষ কর্মকর্তা এই তিনের সমন্বয় প্রয়োজন। কেননা তারা প্রত্যেকে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত।

জন্ম লগ্ন থেকে শিশু মায়ের কাছ থেকে শুরু করে পরিবারে যে শিক্ষা লাভ করে তার নতুন মাত্রা পায় বিদ্যালয়ে। শিশুর জগতের জ্ঞানসমুদ্রে বিচরণের জন্য সবচেয়ে বিশ^স্ত বাতিঘর হলো শিক্ষক। বিদ্যালয় আর শিশুর মাঝে যে সংযোগ সৃষ্টি হয় তা ধরে রাখেন একজন শিক্ষক। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশু হয়ে উঠবে মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারমুক্ত, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক। সকল শিশুর সকল বিষয়ে সমান আগ্রহ থাকে না। তবে সকল শিশুরই কোন না কোন বিশেষ প্রতিভা থাকে। সেই প্রতিভাকে সনাক্ত করতে পারাও শিক্ষকের কাজ।

মানসম্মত শিক্ষা যে তিনটি বিষয়ের সুনিপুণ সম্মিলন যোগাযোগের সঠিক দক্ষতা অর্জন, প্রয়োজনীয় মানসিক ও আবেগিক বিকাশ এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা সম্ভব কেবল একজন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে।
ফলে শিক্ষককে হতে হবে সদা সচেতন ও নিবেদিত শিক্ষাব্রতী। সেই সাথে শিক্ষকের মৌলিক দায়িত্ব যথাসময়ে বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত পাঠের বার্ষিক ও দৈনিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠ উপস্থাপন করবেন। শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ের সাজসজ্জা ও পরিছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে সকল শিক্ষককে। বিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদানে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহারও মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে শিশুর মনোজাগতিক বিকাশের যে প্রয়াাস চালান তার সফলতা নির্ভর করে শিশু তার পরিবারে কতটা সচেতন পরিবেশ পায় তার উপরে। শিশু যে শিক্ষা বিদ্যালয়ে শেখে তা পুনরায় বাড়িতে এসে পড়ার সুযোগ পায়। এই বিষয় দুটি নির্ভর করে শিশুর পারিবারিক আবহ ও অভিভাবকের সচেতনতার উপর। শিশু বিদ্যালয়ে যে পাঠ পাচ্ছে তা সে ঠিকমত আত্মস্থ করতে পারছে কিনা তা দেখাও অভিভাবকের দায়িত্ব।

আবার বিদ্যালয়ে শিশু নিয়মিত পাঠানোর বিষয়টিও তাদের খেয়াল রাখা উচিত। কেননা শিখন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অনিয়মিত উপস্থিতি এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নিয়মিত মা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে শিশুর বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে সরাসরি আলাপের যে সুযোগ রয়েছে তাতে অংশগ্রহণের বিষয়ও অভিভাবকদের সদা আগ্রহী হওয়া উচিত।

বিদ্যালয় ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে কিনা এবং মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে কিনা তা দেখভাল করার দায়িত্ব মূলত প্রাথমিক শিক্ষার তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের উপর।

শিক্ষকদের নানা প্রশিক্ষণ প্রদান, বিদ্যালয় পরিচালনার নানা জটিলতার সমাধান প্রদান, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা সম্পাদন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ, বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির মূল্যায়ন, সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের তত্ত্বাবধানসহ শিক্ষকদের নানা সমস্যার স্মার্ট সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষাদানের উৎসাহিত করে কর্মকর্তাগণ মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

১৯৭০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ভাষণে বলেন, সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছুই হতে পারে না। জাতির পিতার এই উপলব্ধি বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থী ভর্তি, ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত সমানকরণ, ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ চালু, শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত আদর্শ নিয়ে আসা, বিদ্যালয় ও শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি সহ সরকারের এ সকল প্রয়াাস মানসম্মত শিক্ষা বিকাশের নিমিত্তেই চলমান। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার যে অগ্রগতি তা সম্ভব হয়েছে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদীপ্ত মনোভাব এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে।

২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে স্মার্ট সিটিজেন ও দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন তার সম্ভব হবে মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে। নিবেদিত শিক্ষক, সচেতন অভিভাবক এবং প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত দক্ষ কর্মকর্তাগণ হবেন সেই মানসম্মত শিক্ষার কারিগর যা আমাদের সোনার বাংলার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

লেখক- উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে