মাদকের বিনিময়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে তেল, চাল, ডাল!
পদ্মাটাইমস ডেস্ক: সংঘাতকবলিত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি তেলসহ চাল ও ডালের মতো নানা ভোগ্যপণ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসবের সেখান থেকে আসছে ইয়াবা ও আইসসহ বিভিন্ন মাদক। মূলত সংকটের মুখে দেশটিতে তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাংলাদেশের তুলনায় ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছেন সীমান্তের চোরাকারবারিরা।
একদিকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, মাঝে নাফ নদী; অপরপ্রান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। এ কম দূরত্বকে কাজে লাগাচ্ছেন সুযোগসন্ধানীরা। তারা বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি তেলসহ ভোগ্যপণ্য পাচারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে; বিনিময়ে সেখান থেকে আনছে মাদক।
এমনই একটি জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এবং শুকনো মরিচের চালান সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে উপকূলরক্ষী কোস্টগার্ডের অভিযানে ধরা পড়ে। যা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারেই পাচার হচ্ছিল। এটিই একমাত্র ধরা পড়া চালান নয়। গত কয়েক মাসে এধরনের ১০টির বেশি চালান জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্টগার্ড।
মূলত মিয়ানমারের অভ্যন্তরের আরাকান রাজ্যে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই এধরণের পণ্য পাচারের চেষ্টা বেড়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের ১০০ টাকা মূল্যের ভোজ্যতেল মিয়ানমারে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সব পণ্যের দাম সেখানে বাড়তি হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।
এবিষয়ে টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার এইচ এম লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের বিপরীতে মাদকদ্রব্য দেশের অভ্যন্তরে আনার একটি প্রবণতা দেখা যায়। তবে কোনো মাদকদ্রব্য যেন দেশের না প্রবেশ করতে পারে, এবং আমাদের দেশীয় সম্পদ, তেল ও খাদ্যদ্রব্য সেখানে পাচার না হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে জ্বলানি তেল এবং ভোগ্যপণ্য পাচার হলেও তার পরিবর্তে নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা এবং ভয়ংকর মাদক আইসের চালান। মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যন্তরে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সহায়তায় গড়ে ওঠা ইয়াবার কারখানাগুলো বর্তমানে বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। আর তারই সুযোগ নিচ্ছে সীমান্তের চোরকারবারীরা।
সীমান্ত রক্ষীদের কঠোর অবস্থান নেয়ার তাগিদ দিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সবসময় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। সেই অভাব পূরণ করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে থাকে। সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সীমান্তে যারা প্রহরী আছেন, তাদের আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে এই চোরাকারবারি বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ওপর বিশাল একটি প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করবে।
এদিকে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে সব ধরণের পাচার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নূরে আলম মিনা। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে অবৈধ পথে পণ্য পাচার ও দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য খাদ্যদ্রব্য মজুত করা হচ্ছে কি না, সেটি তদারকি করা আমাদের নিয়মিত কাজ। গোপন তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান করব। তবে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নজরদারি আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের শান, কাচিন, কারেন্ট, ইয়াঙ্গুন এবং রাখাইন রাজ্যেসহ সাতটি প্রদেশে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলা যুদ্ধের কারণে সেখানকার খাদ্য পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইন অনেকটাই ভেঙে পড়েছে।