দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ছে বনাঞ্চল, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৪; সময়: ১:৩৯ অপরাহ্ণ |
দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ছে বনাঞ্চল, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  টাঙ্গাইলের সখীপুরে চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই প্রচণ্ড খরতাপে গাছের পাতা শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। পরে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছাই বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এই আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সখীপুরের শাল-গজারির বন। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেয়ার কারণে ছোট গজারিগাছ, ঝোপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেঁচু ও কীটপতঙ্গসহ নষ্ট হচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থলও। পাশাপাশি বন পোড়ানোর কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

জানা গেছে, গত এক মাসে সখীপুরের বনাঞ্চলে অন্তত ১৫টি জায়গায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার বহেড়াতৈল বিটের আওতায় ছাতিয়াচালা সাইনবোর্ড এলাকায় একটি গজারির বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় পাঁচ একর গজারির বন আগুনে পুড়ে যায়। এর আগে গজারিয়া বিট কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত চারটি স্থানে শাল-গজারির বনে আগুনের ঘটনা ঘটে।

এ সময় কালিয়ানপাড়া, গজারিয়া, কীর্ত্তনখোলা বংকী এলাকায় শাল গজারির এসব বনে আগুন দেয়া হয়। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ একর বন পুড়ে যায়। নলুয়া বিটের আওতাধীন দেওদীঘি বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি গজারির বন, নলুয়া বিট কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে একটি, ঘেচুয়া এলাকায় দুটি ও আমের চারা এলাকায় একটি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়দের জানান, গত ২৪ এপ্রিল গজারির বনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তা জানি না। তবে গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি শাল-গজারির বন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে আছে শাল-গজারির বন। বসন্তে, তথা ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রকৃতির নিয়মে শাল-গজারির পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাতের বেলায় আবার কখনো দিনের বেলাতেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

নলুয়া বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামান বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি গজারির বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি। এতে গতবারের চেয়ে বনে আগুন লাগার ঘটনা কম ঘটেছে। আমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই জনবল বাড়াতে হবে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পাহাড়ে আগুন দেয়। আবার অনেকেই জুম চাষ করার ফলে পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধ্বংস করছে। আর এই আগুন দেয়ার কারনে বন্য পশু-পাখি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বনে আগুন দেয়ার ঘটনা অনেক কম। আর আমাদের লোকবল অনেক কম থাকায় আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। এ মৌসুমে বনের এক জায়গায় আগুন লাগলে আমরা পৌছাতে পৌছাতে তা অনেক দুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে কেউ বনে আগুন দিতে না পারে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সুফল প্রকল্পের আওতায় কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে