মেয়রের বিলাসবহুল বাড়ির ইটও খুলে নিয়ে যায়

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪; সময়: ৮:১১ অপরাহ্ণ |
মেয়রের বিলাসবহুল বাড়ির ইটও খুলে নিয়ে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৫ আগস্ট তিনটার দিকেও রাজশাহীতে অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরীর কুমারপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সাথেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তৎক্ষণে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বিষয়টি নিয়ে। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান মেয়র লিটন। এর পর আর তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি রাজশাহীতে। বিকেলের মধ্যেই স্বপরিবারে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীতে শুরু হয় ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।

জ্বালিয়ে দেওয়া হয় নগর ভবনের দোতালা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত। পরে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে রক্ষা পায় বাকি ৫ তলা। যে নগর ভবন ও মেয়রের বাড়ি ছিল একসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পদচারণায় ব্যস্ত, এখন তা শুধুই ধ্বংসস্তুপ। জানালা-দরজা হীন ভবন দুইটিতে ভাঙ্গা-চোরা কাঁচ আর ছায়-ভষ্মের স্তপ পড়ে আছে। হামলা ও অগ্নিসংযোগে মেয়রের বাড়িটি পরিণত হয়েছে জরাজীর্ণ এক ভুতড়ে বাড়িতে। অথচ এই মেয়র লিটনই ছিলেন টানা প্রায় ১৬ বছর ধরে রাজশাহী নগরীর অন্যতম প্রতাপশালী ব্যক্তি। আত্মগোপনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর সবকিছুরই নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি।

সরেজমিন মেয়র লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়িটি একসময় সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় নিরাপত্তাবেষ্টনীর জাল বিছানো ছিল। এখন সেখানে একটি মানুষও নাই। প্রধান ফট থেকে শুরু করে গোটা বাড়িতে একটি দরজাও অবশিষ্ট নাই। সবকটি খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানালার গ্রীলগুলোও। এছাড়াও বাড়ির নিচের প্রাচীরের ইটও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেয়রের এই বিলাসবহুল বাড়িটি থেকে। গোটা বাড়িটিই এখন এক ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এতো মানুষের যাতায়াত ছিল যে বাড়িটিতে, এখন ঘুরে কেউ আর তাকায় না। যারা দেখতে আসে, তারা আসে শুধু ভাঙা-চুরা আর আগুনে পুড়ে যাওয়া দৃশ্য দেখতে। অথচ পালানোর দিন পর্যন্ত এই বাড়িতেই স্বপরিবারে অবস্থান করছিলেন মেয়র লিটন।’

হাসিবুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মেয়রের বাড়ির ইটও খুলে নিয়ে গেছে মানুষ। আর ঘরের বিছানা থেকে শুরু করে এমন কোনো জিনিসপত্র ছিল না যেগুলো লুট হতে বাকি ছিল। একদল ভাংচুর করে গেছে। আরেক দল এসে লুটপাট চালিয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জুনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মাঝে একবার মেয়র নির্বাচিত না হতে পারলেও গোটা শহরের নিয়ন্ত্রক ছিলেন লিটনই। দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহী নগরীর দৃশ্যপট পাল্টে দেন তিনি। গ্রীণসিটি ক্লিনসিটি হিসেবে রাজশাহীর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বোত্র। পাশাপাশি লিটনের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বেড়ে যায়। ধিরে ধিরে অনেকটায় প্রতাপশালীতে পরিণত হোন লিটন। এতে করে রাজশাহী নগরীর সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তাঁর হাতে।

রাসিক সূত্র মতে, মেয়র লিটন ছাড়াও ২৬ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে আছেন ওইদিন থেকেই। এতে করে ব্যহত হচ্ছে নাগরিক সেবাও। এমনকি কোনো কোনো রাস্তায় দিনের বেলাতেও জ¦লছে লাইন। যে লাইটগুলো নিয়ে নগরবাসীর যেমন আগ্রহের শেষ ছিল না, তেমনি সমালোচনাও কম হয়নি।

সূত্রমতে, মেয়রসহ অন্তত ২৬ জন কাউন্সিলর গত ৫ আগস্টের পর নগর ভবনে আসেননি। নগর ভবনে আসার পরিবেশও নাই বলে তিনি দাবি করেন। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে নাগরিক সেবা দিতে গিয়েও হিমশিক খেতে হচ্ছে তাদের।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে