রাজশাহীতে দখল-লুটপাটে বেপরোয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে লোকজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, ছিনতাই এবং পুকুর ও প্রতিষ্ঠান দখলের মত কর্মকান্ড চলছে। তবে পুলিশ বলছে, এসব আর চলতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যেই যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার গাঙ্গপাড়া জনতা ব্যাংকের সামনে থেকে আফজাল হোসেন নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। জমা দেওয়ার জন্য তিনি টাকা নিয়ে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। একই দিনে তাহেরপুর পৌরসভা এলাকায় পৃথক স্থানে চারজনকে পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।
যাদের মধ্যে তাহেরপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র বাবুল খান রয়েছেন। গত সোমবার দুপুরে পৌরসভা ভবন থেকে বের হয়ে মথুরাপুর আসলে তার উপর হামলা হয়। এ সময় তাকে পিটিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সব ঘটনায় থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
আফজাল হোসেন জানান, মাছ বিক্রির পাঁচ লাখ টাকা জনতা ব্যাংকের হাটগাঙ্গপাড়া শাখায় জমা দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল স্থানীয় সন্ত্রাসী মামলা করে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। এ সময় তারা আফজালকে পিটিয়ে জখম করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এর কয়েকদিন আগে জাহাঙ্গীর তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সে টাকা না দেওয়ায় প্রকাশ্যে তার উপর হামলা করে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে।
তিনি আরও জানান, এর আগে গত ৫ আগস্ট এই সন্ত্রাসী গ্রুপ গাঙ্গপাড়া বাজারের পশু ও মৎস খাবার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম নামের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সে টাকা না দেওয়ায় রাতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
অপরদিকে, পুকুর দখল ও মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি। বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া এলাকায় রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসিবুল আলমের ৯০ বিঘা জলকর দখল ও প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ লুটপাট করে নিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
হাসিবুল আলম জানান, মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া এলাকার সন্ত্রাসী ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে একই এলাকার ফেরদৌস রহমান, জাহিদ হাসান, মুনজুর রহমান, বাবু, লিটন ও আশরাফুল ইসলাম ব্যবসায়ী হাসিবুল আলমের কাছে চাঁদা দাবী করে। হাসিবুল আলম তাদের চাঁদা দিতে রাজি না হলে ৯০ বিঘা জলকররের তিনটি পুকুর দখল করে এবং মাছ লুটপাট করে বিক্রি করে দেয়।
ব্যবসায়ী হাসিবুল আলম আরও জানান, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল ৫ বছর মেয়াদে তিনটি পুকুর লিজ নেন। গত ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে ফজলুসহ এলাকার ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পুকুরের পাহারাদারকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে পুকুরগুলো দখল নেয়। এ সময় তারা পুকুরের মাছ লুটপাট করে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ লুটপাট হয়েছে বলে ব্যবসায়ী হাসিবুল আলম জানান।
এছাড়াও গত ১৭ আগস্ট তাহেরপুর পৌরসভার জামগ্রাম এলাকার চারটি পুকুরে বিষ দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ লুট করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। একইভাবে বাগমারা উপজেলার প্রায় ২৫/৩০টি পুকুর দখল ও প্রায় শত কোটি টাকার মাছ লুট করা হয়েছে গত এক মাসে।
এদিকে, রাজশাহী বাগমারায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিদেশি পিস্তলসহ এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বাগমারা উপজেলার গাঙ্গোপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীর নাম লিয়াকতুল আলম লিটন।
জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানান, আর কাউকে দখল, লুটপাট ও ছিনতাই করতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যেই যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। এ সব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নেয়া হবে। মঙ্গলবার রাতে বাগমারার একজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। দখল হওয়ার সম্পদ মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।