শবে কদরে আমরা কী কী ইবাদত করব?
হোছাইন আহমাদ আযমী : শবে কদর শব্দ দ্বয়ের সামষ্টিক অর্থ হল মর্যাদাবান রাত্রি বা ফজিলতপূর্ণ সম্মানিত রাত্রি! এই রাত্রিকে কুরআনে লাইলাতুল কদর নামে অবিহিত করা হয়েছে। এ রাত্রির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে একটি সূরাও নাযিল হয়েছে, যার নাম হল সুরাতুল ক্বদর!
যেখানে শবে কদরের রাত্রিতে ইবাদতের মর্যাদা শুনিয়েছেন স্বয়ং রব্বুল আলামিন নিজেই, তিনি বলেছেন কদরের রজনী হল হাজার মাসের চেয়েও উত্তম! আল্লাহ বলেননি যে, কদর রজনী হল হাজার মাসের সমান! বরঞ্চ তিনি বলেছেন, লাইলাতুল ক্বদরি খইরুম্মিন আলফি শাহর অর্থাৎ ক্বদর রজনী হাজার মাসের চেয়ে উত্তম!
এই ব্যাপারে মহানবী সা. বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় ক্বদর রজনী ইবাদতের মাধ্যমে জাগবে, তার আগেকার সকল গুনাহ মাপ করে দেয়া হবে! (সহিহ বুখারি-৩৫ ইফাঃ-৩৪/ সহিহ মুসলিম-২৫)
আমরা কখন লাইলাতুল কদর তালাশ করবো- বিশ্বনবী সা. বলেন রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রি সমুহে তোমরা ক্বদর রজনী তালাশ করো! অর্থাৎ বিশেষ করে, ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ তম রজনীতে! (সহিহ বুখারি-২০১৭)
বিশ্বনবীর স্পষ্ট বাণির পরেও কেবল ২৭ তম রজনীতে শবে ক্বদর ভেবে মনে করা নিছক বোকামি ব্যাতীত কিছু নয়, কিছু কিছু সাহাবী ও মুজতাহিদ ইমাম ২৭তম রজনীতে ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলতর বলেছেন, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা যদি উক্ত দিনে কদর রজনী না হয়ে বাকি বিজোড় রাত্রি গুলোতে হয়ে যায় তখন আপনার কি হবে?
আপনিতো এরকম একটি ফজিলতের রাত হারিয়ে ফেলছেন গাফিলতির কারণে!
আপনি হয়তো জানেননা যে, যে সকল মুজতাহিদ ইমাম বা সাহাবী বলেছেন ২৭ তম রজনীতে ক্বদর হতে পারে সম্ভাব্য বেশি, তারা কিন্তু সব রাত্রিতেই সারা বছরি কঠোর ইবাদত বন্দেগি করতেন ফলে তারা ২৭ রমজান নিয়ে বসে থাকেননি, তারা সবসময়ই এরকমই বেশিরভাগ তাহাজ্জুদ পড়তেন, ইবাদত করতেন, যদিও ক্বদর রজনী কে গুরুত্ব দিতেন অনেকটা!
মুল কথা হল, উনারা আমার আপনার মত গাফেল ছিলেন না, ফলে যেখানে উনারা গোটা রমজানসহ সারাবছর রাত্রি জেগে ইবাদত করতেন, আর সেখানে আমি আপনি কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনে ক্বদর তালাশ করে সারা বছর ঘুমাচ্ছি, যদি সেই দিনটা নাহয় তাহলেতো আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে তখন, কাজেই বিশ্বনবীর হাদিস অনুযায়ী উক্ত সকল বিজোড় রাতে আমরা কদ্বর রজনী তালাশ করবো, এবং ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করবে এই বিজোড় ৫টি রাতে!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে আমাদের নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক :
(ক) নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্ত ও অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
(খ) লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া। এসব নামাজে কিরাআত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা।
(গ) সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দোয়া করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দোয়া কবুল হয়।
(ঘ) বেশী বেশী তাওবা করবে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। সগীরা কবীরা গোনাহ থেকে মাফ চাইবে। বেশী করে শিরকের গোনাহ থেকে খালেস ভাবে তাওবা করবে। কারণ ইতিপূর্বে কোন শিরক করে থাকলে নেক আমল তো কবুল হবেই না, বরং অর্জিত অন্য ভাল আমলও বরবাদ হয়ে যাবে। ফলে হয়ে যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করবে। তাসবীহ তাহলীল ও যিকর-আযকার করবেন।
(চ) একাগ্রচিত্তে দোয়া করা। বেশী বেশী ও বার বার দোয়া করা। আর এসব দোয়া হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে। দোয়া করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য. জীবিত ও মৃতদের জন্য, পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে নিম্নের এ দু’আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন :
হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)
লেখকঃ শিক্ষক, জামিয়া উসমানিয়া হোছাইনাবাদ কাটাখালী মাদ্রাসা।