আজও হতে পারে পবিত্র শবে কদর

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২০; সময়: ১:৪২ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
আজও হতে পারে পবিত্র শবে কদর

হোছাইন আহমাদ আযমী : রমযানের পুরো মাস জুড়ে বিরাজ করে রহমত বরকত এবং ক্ষমার ঘোষণা। তবে এ মাসে রয়েছে বিশেষ এক মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা এ রাতের ব্যাপারে বলেন, কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। সূরা কদর (৯৭) : ৩-৫

তাই এ রাতের অন্বেষণে যেমন আগ্রহী হওয়া জরুরি তেমনি এ রাতে ইবাদত বন্দেগী নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির, তওবা-ইস্তিগফার, দুআ-দরূদ ইত্যাদির প্রতিও আরো যত্নবান হওয়া কাম্য।

লাইলাতুল কদর : যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছেঃ
রমযানে কদরের রজনীতে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীম নাযিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয়ই আমি কদর রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। সূরা কদর (৯৭) : ১

আরো ইরশাদ হয়েছে- আমি এ (কিতাব) অবতীর্ণ করেছি বরকতপূর্ণ রজনীতে, বস্তুত আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান (৪৪) : ৩)

এখানে লাইলাতুম মুবারকা বা বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর বুঝানো হয়েছে।তো কদর রজনী একদিকে যেমন মহিমান্বিত অপরদিকে তা অত্যন্ত বরকতপূর্ণও বটে।

লাইলাতুল কদর : যে রাতে গুনাহ মাফ হয়ঃ
এ রাতে আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত ও করুণা বর্ষিত হয়। নবীজী বলেন- …যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪)

তো ঈমান ও ইহতিসাবের উপলব্ধি জাগরূক রেখে লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করা বান্দার গুনাহ মাফের একটি বড় মাধ্যম।

লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক বড় মাহরূমীঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এত বড় খোশখবরী পাওয়ার পর এ রাতের ক্ষমা ও রহমত লাভের চেষ্টা না করা অনেক বড় বঞ্চনার বিষয়। হযরত আনাস রা. বলেন, রমযান আসলে নবীজী বলতেন- এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত। তাতে একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। আর কেবল অভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ২১০৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ২৪২৭)

সুতরাং হেলায় না কাটিয়ে কদরের রাতের কদর করা দরকার।

নবীজী শেষ দশকে ইবাদত বাড়িয়ে দিতেনঃ
হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী কদরের রাত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে রমযানের শেষ দশকে তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ হিসেবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন।আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. নবীজীর শেষ দশকের আমলের বিবরণ দিয়ে বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দিনগুলোর তুলনায় রমযানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৫)

তিনি আরো বলেন- রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজী পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪)

যেভাবে লাভ করতে পারি শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলতঃ
মুমিনমাত্রেরই কর্তব্য হল কদর রজনীর পূর্ণ কদর করা। অন্তত এ রাতে বিলকুল গাফেল না থাকা। রমযান মাসের ফরয নামাযগুলো জামাতের সাথে আদায় করার মাধ্যমে কদর রজনীর ন্যূনতম কদর হতে পারে। হাদীস শরীফে এসেছে- যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধ রজনী কিয়াম করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাযও জামাতে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়ল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৬)

তাই এ মাসে জামাতে নামাযের প্রতি সবিশেষ যত্নবান হওয়া জরুরি। তাহলে আশা করা যায় শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত থেকে মাহরূম হব না ইনশাআল্লাহ।

শবে কদরে কী দুআ করব?
লাইলাতুল কদর যেহেতু বিশেষ রজনী, তাই এ রাতে বিশেষ কিছুই চাওয়া দরকার।তো আমি বিশেষভাবে কী চাইব এবং কীভাবে চাইব? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. নবীজীকে জিজ্ঞাসা করেন ইয়া রাসূলাল্লাহ, যদি আমি জানতে পারি, আজ লাইলাতুল কদর তাহলে আমি কী দুআ করতে পারি? নবীজী বললেন, তুমি বল, আয় আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতেই ভালবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫১৩)

একজন মুমিনের জন্য তার রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অপেক্ষা বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!

তাৎপর্যপূর্ণ এ দুআটি কেবল লাইলাতুল কদরের জন্যই নির্ধারিত নয়। পুরো রমযানেই, ইফতারীর সময়, সাহরীর সময় এবং অন্যান্য সময়েও পড়া যায়। এমনকি রমযান ছাড়াও এ দুআ পড়া যায়। নবীজীর শেখানো দুআ যত পড়া যায় ততই লাভ।

লাইলাতুল কদরের তালাশে…
হাদীস শরীফে কদর রজনী নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো সামনে রেখে যা বুঝে আসে, লাইলাতুল কদর লাভের জন্য গোটা রমযান, বিশেষ করে রমযানের শেষ দশক, আরো বিশেষ করে বললে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই শেষ দশকে শবে কদরের অন্বেষণে পূর্ণ মনোযোগী এবং প্রস্তুত থাকা চাই। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২০)

অন্য বর্ণনায় এসেছে- তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদর অন্বেষণ কর। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৬)

যেহেতু হাদীসে লাইলাতুল কদর নির্ধারিত করে বলা হয়নি তাই নির্দিষ্ট কোনো রাতে নির্দিষ্ট কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাঝে তা বেঁধে ফেলা ঠিক নয়।আর লাইলাতুল কদরের জন্য হাদীসে নির্দিষ্ট করে কোনো আমলের কথাও উল্লেখ নেই। তাই বিদআত ও রুসুমাত থেকে দূরে থেকে ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদতের মাধ্যমে এ রাত যাপন করাই শ্রেয়।

লেখকঃ শিক্ষক, জামিয়া উসমানিয়া হোছাইনাবাদ কাটাখালী রাজশাহী।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে