বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নাগপাল নেই!

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২০; সময়: ৫:২৪ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নাগপাল নেই!

মনোয়ারুল হক : দূর্গা শক্তি নাগপাল। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে জন্ম গ্রহণকারী আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) ২০১০ সালের ব্যাচে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী করে ২০১১ তে চাকরিতে যোগদান করা অফিসার। এই আইএএস অফিসার তার সাহস ও দ্বায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠার কারণে ভারতীয় জনগণের কাছে সততার প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

২০১৩ সালের ঘটনা। ভারতীয় কেন্দ্রে তখন কংগ্রসের মনমোহন সিং নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এনডিএ। আর উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির মুলায়েম সিং যাদব জয়লাভ করে তার ছেলে অখিলেশ যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করেন।

দুর্গা শক্তি নাগপাল তখন উত্তর প্রদেশের কানপুরে যুগ্ম-ম্যজিস্ট্রেটের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত । তার প্রথম সাড়াজাগানো ঘটনা, তার জেলায় অবৈধ বালু খননকারী মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ঘটনা অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় মসজিদের বহিরাঙ্গণে দেয়াল তৈরিতে বাঁধা দেওয়া।

২০০৯ ও ২০১১ সালে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট এক আদেশ বলে নির্দেশ প্রদান করে যে, এর পর যথাযথ অনুমতি ব্যতিরেকে যদি মন্দির/মসজিদ/ চার্চ/ গুরুদুয়ারা কিংবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয় তাহলে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানা মাত্র বেআইনি কাজ বন্ধ করবে এবং তাতে যদি কোনো ধর্মীয় উত্তজনা সৃষ্টি হয় তবুও তা বন্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয় ঘটনার পরে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অখিলেশ যাদবের রাজনৈতিক দলের অবৈধ বালু খননকারীদের সঙ্গে জড়িত মুসলিম ধর্মাবলম্বী নেতাকর্মীরা মসজিদ ইস্যুকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করে, আর গ্রামের মানুষও মূল ঘটনার ব্যাপারে অবহিত ছিল না।

দুর্গা শক্তির মত ২৯ বছর বয়সী একজন নবীন অফিসার, যার চাকরির বয়স মাত্র দু’বছর, তার সাহসিকতায় সমগ্র ভারতের গণমাধ্যম তার পাশে দাঁড়ায় এবং ব্যাপক জনমত গড়ে তোলে।

১৩ ই জুলাই এলাহাবাদ হাই কোর্টে এক পিআইএল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) মামলা দায়ের করেন একজন আইনজীবী, এই মর্মে যে, এই এ ধরণের সাসপেনশন আদেশ রাষ্ট্রের কর্মচারীদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধার সৃষ্টি করবে। কিন্তু হাইকোর্ট মামলাটি পিআইএল নয় বলে খারিজ করে দেয়।

এরপর ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের আরেকজন আইনজীবি পিআইএল মামলা রুজু করে, একই দিনে সুপ্রিমকোর্টের তিনটি বেঞ্চে মামলাটি উপস্থাপিত হলে প্রথম দুইটি আদালত মামলাটি শুনতে অস্বীকৃতি জানালেও তৃতীয় বেঞ্চে একজন মুসলিম বিচারপতির যৌথ বেঞ্চ দুর্গা শক্তিকে মামলা করার উপদেশ প্রদান করে আদেশ প্রদান করেন।

উত্তর প্রদেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় গণমাধ্যম এমনকি সর্বভারতীয় জামায়েতে ইসলাম হিন্দের সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ দুর্গার বরখাস্ত আদেশের বিরেধিতা করে প্রকাশ্য বিবৃতি প্রদান করেন। দূর্গার পক্ষ অবলম্বন করে সর্বভারতীয় আইএএস অফিসারদের সমিতি, তার বরখাস্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উদ্দেশে পত্র প্রদান করে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। পত্রে দুর্গার উপর যেন কোন অন্যায় না হয় তা দেখার অনুরোধ করেন।

এর ফলে অখিলেশ যাদব পিছু হটতে বাধ্য হন। দূর্গা শক্তি নাগপালকে তার অফিসে সাক্ষাতের জন্য ডেকে পাঠান। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে অফিসে দেখা করলে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন।

২০১৩ সালের ওই ঘটনা তখনই নিষ্পত্তি হয়নি। একই কর্মস্থলে যোগদান করার পর তাকে আগের মতই নানা বেআইনী চাপের মুখে রাখে অখিলেশ যাদবের প্রশাসন ও তার রাজনৈতিক দল।

অবশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ প্রদান করেন। এখানে উল্লেখ করা দরকার, ভারতীয় রীতি অনুসারে সরকারি কর্মচারীকে কোনো উচ্চ দায়িত্ব প্রদান করা হলে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলা হয় । বাংলাদেশের মত ওএসডি করার কোন বিধান নাই।

বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন নাগপালের জন্ম হয় নাই।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে