বিধবা-বিপত্মীকদের পেনসন প্রাপ্তি কতদূর?

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২০; সময়: ১:৩৩ অপরাহ্ণ |
খবর > মতামত
বিধবা-বিপত্মীকদের পেনসন প্রাপ্তি কতদূর?

বিবেক মানবতা দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব মুলতঃ ব্যক্তি মানুষ ও সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। আর যদি প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রযন্ত্র হয় তবে সেই রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক তার সুফল ভোগ করে থাকেন। এই সুফল ভোগ বিষয়টি আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর ও শাখা প্রশাখা প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায়। আর আমজনতার সংযোগ সম্পর্কের সুযোগ হয় প্রান্তের প্রতিষ্ঠানের সাথে।

কিছুদিন থেকে আমাকে একটা বিষয় নিয়ে কিছু পীড়িত মানুষের অব্যক্ত কান্না পীড়া দিচ্ছে। করোনা সংকট যাদেরকে একেবারে আষ্টেপিষ্টে ধরেছে। যারা ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতেও পারছেন না। আবার দারিদ্রতা সহ্য-ধর্য্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। আজ এমন কিছু মানুষের কল্যাণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

বিষয়টা যারা আবারো পেনশন সুবিধায় ফেরত এসেছেন তাদের নিয়ে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের অর্থমন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে (যারা আবারো পেনশন সুবিধায় ফেরত এসেছেন) তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এছাড়া তাদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রাপ্যতার বিষয়ে অর্থ বিভাগের ২০১৭ সালের ৩ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুসরণীয় হবে, অর্থাৎ তারা পেনশন সুবিধার পাশাপাাশি চিকিৎসা ও উৎসব ভাতাও পাবেন।

এর আগে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আবারও পেনশন সুবিধায় ফিরিয়ে আনার কথা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ট্রেজারি অফিস এবং ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমতাবস্থায় পেনশনভোগীদের বিধবা/বিপত্মীকরা তাদের প্রাপ্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করার পরেও সংশ্লিষ্ট অফিস বা ব্যাংক কেন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

এমন অনেকেই আছেন যাদের একমাত্র সম্বল স্বামীর রেখে যাওয়া এই পেনশন। সেই সমস্ত দুস্থ মহিলা-পুরুষরা আজ ছয় মাস ধরে অসহায় দিনাতিপাত করছেন। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় আশা দরকার।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শতভাগ’ পেনশন বিক্রি বা সমর্পণ ব্যবস্থা চালু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ পদ্ধতি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি একই বছরের ১ জুলাই থেকে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের বিধান চালু করা হয়।

শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম গত বছর পেনশন সুবিধা ফেরত পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে। পরবর্তীকালে অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরামের নেতারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেন। তাদের আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের আবার পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনেন।

জানা যায়, অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলো। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ঘুরাঘুুরি করেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভূক্তভোগিরা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিলো, ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী, অর্থাৎ যেসব সরকারি কর্মচারী পেনশনের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন, অবসরের তারিখ থেকে ১৫ বছর পার হলে তাঁরা আবার মাসিক পেনশন পাবেন। এমন সিন্ধান্ত থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে সরকারি চাকুরীজীবির বিধবা স্ত্রীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রাজশাহী নগরীর করপোরেট শাখার কর্মকর্তারা ওপরের নির্দেশনার কারণ দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পাশাপাশি তারা ঢাকা হেড অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু হেড অফিসে ফোন করলে রিসিভ না হওয়ায় বিষয়টি কি অবস্থায় জানা সম্ভব হয়নি।

ভূক্তভোগিরা জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের পুরো টাকা তুলে নিয়েছিলেন। পেনশনধারি স্বামী/স্ত্রী জীবিত থাকার সময় ও মৃত্যুর পর এমনিতেই পবিবার নিয়ে খুব কষ্ট জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ টাকাটা পেলে তারা খুবই উপকৃত হবে। ভুক্তভোগিরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

লেখক- শিক্ষিকা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে