রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯৬২ : দারুশার নির্মমতা

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২১; সময়: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯৬২ : দারুশার নির্মমতা

আসাদুজ্জামান রাসেল : রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯৬২: দারুশার নির্মমতা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রকাশিত বইটি উপমহাদেরশের নিকৃষ্ট রাজনৈতিক পরিণামের চাপা দেয়া এক চরমপত্র বা দলিল । এখানেও একধরনের সমকালীন রাজনৈতিক আর্থিক ও সামাজিক উন্মাদনা কাজ করেছে। ধর্মীয় বাতাবরণকে ঢাল করে রাষ্ট্রিক পৃষ্টপোষকতায় এক বিশেষ শ্রেণির স্বার্থসিদ্ধির দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের বহি:প্রকাশ ছিলো রাজশাহীর দাঙ্গা প্রসূত দারুশার নির্মম হত্যাকাণ্ড ।

এ ঘটনাকে উপনিবেশিক শাসনামলের সাম্প্রদায়িকতার সামগ্রিক আধার থেকে আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই; বরং এ ঘটনা উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবাদের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে সম্পৃক্ত।

এখানে লেখক-গবেষক তাঁর গবেষণায় চাপা পড়ে থাকা এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড উম্মোচন করেছেন। ধর্মীয়- সাম্পরদায়ীক রাজনীতির নিকৃষ্ট পর্যায়ের হত্যাকাণ্ড ছিলো রাজশাহীর দাঙ্গা প্রসূত দারুশার হত্যাকাণ্ড। লেখক-গবেষক এ হত্যাকাণ্ডকে কেন দাঙ্গা হিসেবে অভিহিত করেছেন তার ব্যাখ্যা খুবই পরিষ্কার।তিনি তাঁর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংজ্ঞায়নে তা পরিষ্কার করেছেন। রাজশাহীর দারুশার মতো গ্রামীণ সমাজে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে যে নির্মম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হত্যালীলা সংগঠিত হয়েছিলো এবং স্থানটির দূরুত্ব রাজশাহী শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার; নিহতের মানুষের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষক প্রায় চৌদ্দশত হবে বলে লিখেছেন। উপমহাদেশের দাঙ্গার ইতিহাসের ধারবাহিকতায় তা এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হিসেবেই চিহ্নিত করে। অন্তত ভৌগোলিক স্থানের পরিসর বিবেচনা করলে।

সাদিকুর রহমান রচিত এ বইটিতে উপনিবেশিক শাসন আমলের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের অস্থিরতা; এবং এর সঙ্গে বৃটিশ শোষণ-শাসন ও বিভেদ নীতির কৌশল কীভাবে সম্পৃক্ত তার ব্যাখ্যাও করেছেন।

উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অর্থাৎ দেশভাগ এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। কারন ব্রিটিশ শাসণ এদেশের সামাজিক সম্প্রীতিকে কীভাবে সংঘাতময় ধর্মীয় -সাম্প্রদায়িকতায় রূপায়িত করেছিলো তার অখন্ড সম্পৃক্ততার উদাহরণ হলো রাজশাহীর দাঙ্গা প্রসূত দারুশার নির্মমতা । বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘ লালিত ঐতিহ্যযের মধ্য থেকে কীভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উন্মেষ ঘটেছে তার
এক নাতিদীর্ঘ পর্যালোচনা এবং বিষয়গত ও বিষয়ীগত অবস্থার আলোকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীর দারুশা অঞ্চলের দাঙ্গার যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রাষ্ট-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগীতা ছাড়া ঘটতে পারে না। প্রায় চৌদ্দশত মানুষকে হত্যা করে, তাদের মাটিচাপা দেয়া হয়। এসবে রাষ্ট-প্রশাসন জড়িত সেক্ষেত্রে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। এসব কিছুই বিভিন্নভাবে তুলে ধরার হয়েছে গবেষণার পদ্ধতিগত নীতি মেনে। রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসের তেইশ তারিখে শুরু হলেও তা চলে ওই মাসের শেষ অবধি এবং মে মাসের প্রথম দিকেও।

দীর্ঘ এ সময় দারুশার মানুষকে পুড়িয়ে -কেটে হত্যার স্থানীয় নামকরণ ছিলো হেন্দুকাটা। বাস্তবিক অর্থেও এটা কোনো জেনোসাইড হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

কিন্তু, লেখক-গবেষক তার গবেষণাতে যে ন্যারেটিভ উপস্থাপন করেছেন সেটির সঙ্গে ওপনিবেশিক আমলে লালিত পালিত ও দেশভাগের মাধ্যমে পরিণতি প্রাপ্ত রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার বিষকেই এ দাঙ্গার ও নির্মমতার মূখ্য কারণ হিসেবে তুলে এনেছেন। অদ্যাবধি এর ছোবল থেকে বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তান মুক্ত নয়, এর সঙ্গে পুরো বিশ্বের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দৃশ্যমান।

রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১৯৬২: দারুশার নির্মমতা ; লেখক : সাদিকুর রহমান, প্রকাশনী: দ্যু প্রকাশনী, একুশে বই মেলা ২০২০ প্রথম সংস্করণ, পেপার ব্যাক, মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৬।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে